মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১১

*-* দুই ঘণ্টার বেশি টিভি দেখলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে



টিভি দেখার জন্য যে আপনাকে হৃদঝুঁকির মধ্যে পড়তে হবে তা কি কস্মিনকালেও ভেবেছিলেন? না ভেবে থাকলে এখন ভাবা শুরু করুন। কারণ ব্রিটেনের একদল গবেষক জানিয়েছেন, যারা প্রতিদিন দুই ঘণ্টা ব তারও বেশি সময় ধরে টেলিভিশন দেখেন, তাদের হৃদরোগের আশঙ্কা বেশি।
গবেষণা দলের প্রধান ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনের গবেষক ড. ইমানুয়েল স্টামাটাকিস এর ওপর একটি গবেষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি গভীরভাবে দেখেছি মানুষ তার কাজ শেষ করার পর কীভাবে তাদের সময় কাটাতে পছন্দ করে এবং আমাদের স্বাস্থের ওপর এসবের প্রভাব কী?’
স্কটিশ হেলথ সার্ভে অব হাউজহোল্ডার নামের একটি সংগঠনের ৪ হাজার ৫১২ জন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির ওপর গবেষণা করেছেন এ গবেষক ।
তুলনা করে দেখা গেছে, যারা দিনে দুই ঘণ্টার কম টিভি দেখে তাদের চেয়ে যারা দিনে চার ঘণ্টা বা তার বেশি সময় টিভি দেখে তাদের ৪৮ শতাংশ মৃত্যুঝুঁকি বেশি। হৃদরোগ বা এ ধরনের রোগের জন্যও তারা ১২৫ শতাংশ ঝুঁকিতে থাকে।

*-* বুড়িয়ে যাওয়া রোধে ১৫ মিনিটের ব্যায়াম



বুড়িয়ে যাওয়া রোধে ১৫ মিনিটের ব্যায়াম
বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করতে ১৫ মিনিটের ব্যায়ামই যথেষ্ট। এ জন্য প্রয়োজন প্রতিদিন ১৫ মিনিটের একটি পরিশ্রমী ব্যায়াম অথবা শরীর থেকে ঘাম ঝরে এমন কোন শ্রমসাধ্য কাজ। সামপ্রতিক গবেষণায় এমন তথ্য পেয়েছেন গবেষকরা। ক্রমাগত মানসিক বা শারীরিক চাপ এবং শরীরের প্রয়োজনীয় অনেক কোষের ক্ষয়ের কারণে মানুষের মনে এবং শরীরে বার্ধক্য বাসা বাঁধে।
গবেষণায় দেখা যায়, নিয়মিত ১৫ মিনিটের ব্যায়াম বা ঘাম ঝরানো পরিমিত মাত্রার পরিশ্রমে এই বার্ধক্যের গতি অনেকটাই কমে যায়। শরীরকে বেশি আরাম না দিয়ে একটু খাটিয়ে নিলেই লাভ, মনস্তত্ত্ববিদ ইলি পুটারম্যানের উদ্ধৃতি দিয়ে এমনটিই জানিয়েছে এক্সপ্রেস ডট কোর ডট ইউকে।

*-* বুড়িয়ে যাওয়া কমায় আঙুর



আঙুরের মধ্যে নানা খাদ্য ও ভেষজগুণের সন্ধান পেয়েছেন চিকিত্সা বিজ্ঞানী ও গবেষকরা। তারা এটিকে একদিকে খাদ্য হিসেবে অন্যদিকে ভেষজ শিল্পেও ব্যবহার করছেন। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এই ফলটি পাওয়া যায়। এর প্রায় ৭৯ শতাংশই পানি। এছাড়া এতে ফ্রুকটোজ এবং খনিজ উপাদানসহ দেহের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু উপাদান আছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইনকোনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সম্প্রতি আঙুরে এক ধরনের লোহিত উপাদানের সন্ধান পেয়েছেন। ‘রেজভারেট্রল’ নামের এই রাসায়নিক উপাদান হৃিপণ্ড এবং রক্তনালীগুলোকে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। কম ক্যালোরিযুক্ত এ লোহিত উপাদান আয়ু বাড়ায় এবং বুড়িয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে কমিয়ে দেয়। এছাড়া ভিটামিন এ, বি এবং সি ছাড়াও রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, লৌহ, আয়োডিন এবং ফসফরাসের মতো খনিজ উপাদান। আঙুরের ফ্রুকটোজ সহজে রক্তে প্রবেশ করতে পারে এবং একে গুরুত্বপূর্ণ শর্করা হিসেবে গণ্য করা হয়।
চিকিত্সা ও পুষ্টিবিদরা আঙুর, খেজুর এবং কিশমিশকে পূর্ণাঙ্গ খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করেন। এ তিনটি খাদ্য থেকে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন পাওয়া যায়। আঙুরের মতো ফল দেহের প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করতে পারে। তাই অল্প পরিমাণে আঙুর বা কিশমিশ খেয়ে মানুষ দৈহিক ও মানসিক পরিশ্রমের জন্য প্রচুর শক্তি পেতে পারেন।আঙুর হতাশা প্রতিহত করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে দুঃখ-বেদনা, মানসিক পীড়ন ও বিষণ্নতা প্রতিহত করার ক্ষেত্রে আঙুর বিশেষ ফলদায়ক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।আধুনিককালের চিকিত্সা বিজ্ঞানীরা কালো আঙুরে হতাশা বা বিষণ্নতা প্রতিরোধক উপাদানের সন্ধান পেয়েছেন। এ ধরনের আঙুরে পটাশিয়াম আছে। আর তাই হতাশা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে এ আঙুর। বুক ধড়ফড় করার মতো উপসর্গও দূর করতে সাহায্য করে পটাশিয়াম। এই উপাদান বিষণ্নতা দূর করে সুখ এবং আনন্দের একটি অনুভূতি সৃষ্টি করে। আঙুর রক্ত পরিশোধন, উচ্চরক্তচাপ, ডায়রিয়া ও ত্বকের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
ত্বকের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য মুখে ভেষজ বা ভেষজ নয় এমন ‘মাস্ক’ ব্যবহার করা হয়। আঙুরের নির্যাস থেকে সহজেই প্রাকৃতিক ‘মাস্ক’ তৈরি করা যেতে পারে। এ ধরনের ‘মাস্ক’ ব্যবহারে মুখের বলি রেখা দূর হতে পারে।
আঙুর শুকিয়ে তৈরি হয় কিশমিশ এবং কিশমিশে ৬০ শতাংশ ফ্রুকটোজ রয়েছে।
ব্রিটেন থেকে প্রকাশিত ‘ক্যামেস্ট্রি অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’ নামের সাময়িকীতে বলা হয়েছে, কিশমিশে এমন কিছু শক্তিশালী উপাদান আছে যা আলঝেইমার্স রোগ প্রতিহত করতে সহায়তা করে। বীচিবিহীন আঙুর থেকে তৈরি কিশমিশে ক্যান্সার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আছে ।
বিডি রিপোর্ট 24 ডটকম

*-* মাছ হৃদরোগ,ডায়াবেটিস,স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়



মধ্যবয়সী ও বৃদ্ধরা যারা নিয়মিত মাছ খান তাদের হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন একটি গবেষণায় একথা বলা হয়েছে। মাছ যারা কম খান তাদের তুলনায় যারা প্রতিদিন মাছ খান তারাই এ উপকার পাবেন বলে গবেষণায় জানানো হয়েছে।
তবে খাদ্যতালিকায় মাছ থাকার কারণেই এ উপকার পাওয়া যায় কিনা তা এ গবেষণা থেকে নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
কিন্তু গবেষকরা বলছেন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড স্যামন, ম্যাকেরেল এবং আলবাকোর টুনা মাছে প্রচুর পরিমাণ থাকে যা হার্টের জন্য উপকারী হতে পারে।
ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় দেখা গেছে, ওমেগা-৩ রক্তের ট্রিগলিকেরিডস নামক চর্বি কমাতে সহায়ক।
ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথ- এর গবেষকরা আরো বলেছেন, মাছের তেল রক্ত চাপ কমায় এবং হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যু ঝুঁকি কমাতেও সহায়ক হতে পারে।
প্রাপ্তবয়স্ক ৩ হাজার ৫শ কোরীয়র ওপর নতুন এ গবেষণা পরিচালনায় দেখা গেছে, যারা মাছ কম খেয়েছে তাদের তুলনায় যারা প্রতিদিন মাছ খেয়েছে তাদের ক্ষেত্রে তিন বছরে ‘মেটাবোলিক সিনড্রম’ (ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকাক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ) দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা ৫৭ শতাংশ কম প্রমাণিত হয়েছে।

*-* পাকা কলা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়



পাকা কলার অনেক গুণ। পাকা কলা খেতে শুধু যে সুস্বাদু তাই নয়,পাকা কলার ভেষজ গুণও অসামান্য। শরীর ও মনকে নিমেষেই ঝরঝরে করে দেয়, অসুস্থতাও কমায় । বিজ্ঞানীরাও জোরেশোরে সেই কথাই বলছেন। তারা বলছেন, পাকা কলা স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুলাংশে কমায়। তাই সকালের নাস্তায় এবং দুপুর ও নৈশ ভোজে অন্তত একটি করে কলা খান। ফলে শরীর প্রচুর পটাশিয়াম পাবে, মস্তিস্ক রক্ত চলাচলে জমাট বদ্ধতার ঝুঁকি ২১ শতাংশ কমে যাবে।
ব্রিটিশ ও ইটালিয়ান গবেষকদের এই সমীক্ষায় এটাও স্পষ্ট হয়েছে যে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ অন্যান্য খাদ্য যেমন সবজি, বাদাম, দুধ, মাছ, ডাল খেয়েও স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। তবে পূর্বেকার সমীক্ষায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও স্ট্রোক রুখতে কলার কথা গুরুত্বের সাথে বলা হলেও কলা নিয়ে এতদিন তেমন গবেষণা চলেনি। সর্বশেষ গবেষণাটি আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওগ্রাফির সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞানীরা ৬০ এর দশক থেকে এ যাবৎ প্রাপ্ত সকল সমীক্ষা খতিয়ে দেখে সর্বশেষ এ ফলাফল প্রকাশ করেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, দৈনিক ১৬০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম গ্রহণ করলেই স্ট্রোকের ঝুঁকি এক পঞ্চমাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব। ইতিপূর্বে ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য দৈনিক পটাশিয়াম গ্রহণের পরিমাণ সাড়ে তিন হাজার মিলিগ্রাম নির্ধারণ করেছিলেন। প্রতিটি কলায় গড়ে প্রায় ৫০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম রয়েছে। যা শরীরে রক্তচাপ কমিয়ে আনে ও পানির ভারসাম্য রক্ষা করে। উল্লেখ্য, শরীরে পটাশিয়াম কমে গেলে অনিয়মিত হার্টবিট, খিচুনি, অনিদ্রা ও ডায়রিয়ার মতো অসুখ দেখা দেয়।

*-* কোলেস্টেরলের কিছু তথ্য



কোলেস্টেরল কী?কোলেস্টেরল হলো এক ধরনের পিচ্ছিল চর্বি জাতীয় জিনিস যা নতুন কোষ তৈরি ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হয়। যদি কেউ উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার বা বেশি মাত্রায় স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার খায়, কিংবা তার শরীরের ধারা এমন যে দেহ বেশি কোলেস্টেরল তৈরি করে, তাহলে তার শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকবে। কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে ধমনী বা রক্তবাহী নালিগুলো শক্ত হয়ে যায়। এটি ঘটে যখন চর্বি এবং ক্যালসিয়াম ধমনীর ভেতরে জমতে শুরু করে। জমতে জমতে এরা ধমনীর মধ্য দিয়ে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি শুরু করে। অন্তিম ক্ষেত্রে চলাচল রুদ্ধ করে দেয়। এর ফলে করোনারি আর্টারি রোগে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
দেহে কোলেস্টেরল আসে দুটি জায়গা থেকে : আমাদের খাবার থেকে আর দেহের যকৃত যা সৃষ্টি করে তার থেকে। দেহের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় আশি ভাগ কোলেস্টেরলই যকৃত সৃষ্টি করতে পারে।
কোলেস্টেরল বেশি কথাটার অর্থ কী?রক্ত পরীক্ষা করে কোলেস্টেরলের পরিমাণ মাপা যায়। সেখান থেকে বোঝা যায় কোলেস্টেরলের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত কিনা। কোলেস্টেরল মাপা হয় প্রতি ডেসিলিটারে কত মিলিগ্রাম আছে এই হিসেবে (mg/dL)। অনেক সময় প্রতি লিটারে কত মিলিমোল আছে (mmo/L) সেই হিসেবেও মাপা হয়।
এলডিএল এবং এইচডিএল কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসেরাইডস কী?কোলেস্টেরল রক্তের মধ্যে বাহিত হয় প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত অবস্থায়। এই সংযুক্ত কোলেস্টেরল-প্রোটিনকে বলা হয় লিপোপ্রোটিন। লিপোপ্রোটিনকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়—বেশি ঘনত্বের (high density), কম ঘনত্বের (low density) বা খুব কম ঘনত্বের (very low density)। লিপোপ্রোটিন কোন শ্রেণীতে পড়বে তা নির্ভর করে প্রোটিনের তুলনায় চর্বির পরিমাণ কতটা। যদি প্রোটিনের তুলনায় চর্বি বেশি থাকে তাহলে তাকে low-density lipoprotein (LDL) কোলেস্টেরল বলা হয়। খউখ হলো ‘খারাপ’ কোলেস্টেরল, কারণ এটি রক্তবাহী ধমনীর দেয়ালে জমে নালিপথ রুদ্ধ করে দিতে পারে। LDL-এর পরিমাণ কমাতে পারলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ইত্যাদির সম্ভাবনা কমানো যায়।
High-density lipoprotein cholesterol (HDL) কে অনেক সময় বলা হয় ‘ভালো’ কোলেস্টেরল, কারণ এটি রক্তবাহী নালিতে কোলেস্টেরল না জমতে সাহায্য করে। এতে ফ্যাটের তুলনায় প্রোটিন বেশি থাকে। HDL কোলেস্টেরল পরিমাণ বেশি থাকাটা যাদের হার্টের রোগী বা যাদের হার্টের অসুখের সম্ভাবনা আছে তাদের পক্ষে ভালো।
ট্রাইগ্লিসারাইডস হলো আরেক ধরনের চর্বিজাতীয় পদার্থ যেটি খুব কম ঘনত্বের লিপোপ্রোটিনের মাধ্যমে রক্তে প্রবাহিত হয়। রক্তে খুব অল্প পরিমাণেই ট্রাইগ্লিসারাইডস থাকে, বেশিরভাগই জমা থাকে টিস্যুর মধ্যে। LDL যখন বেশি আছে, তখন ট্রাইগ্লিসারাইডসও বেশি থাকলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
কোলেস্টেরল কেন বেশি হয়?নানা কারণে কোলেস্টেরল বেশি হতে পারে; কিছু কারণ নিয়ন্ত্রণযোগ্য, কতগুলো নয়।যেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেগুলো হলো—অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান, এক্সারসাইজের অভাব, বেশি কোলেস্টেরল ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার। এগুলো বাজে কোলেস্টেরল (LDL) ও ট্রাইগ্লিসারয়েডকে বাড়ায়, HDL-কে কমায়।
যেগুলো নিয়ন্ত্রণাধীন নয়, তার মধ্যে একটি হলো জন্মগত সমস্যা, ‘লিপিড ডিসঅর্ডার’। এছাড়া বয়স, পুরুষ না স্ত্রী—এগুলোরও কোলেস্টেরলের ওপর প্রভাব আছে। যেমন—২০ বছরের পর থেকে দেহে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রথম দিকে পুরুষদের কোলেস্টেরলের মাত্রা নারীদের থেকে বেশি থাকে; কিন্তু ৫০ বা তার কাছাকাছি বয়স থেকে নারীদের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। বয়ঃসন্ধির পর নারীদের ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা পুরুষদের থেকে সাধারণত বেশি থাকে ইত্যাদি। এছাড়া কোলেস্টেরলের ওপর ওষুধেরও কিছু প্রভাব আছে।রক্ত পরীক্ষা করে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিরূপণ করা যায়। যদি কোলেস্টরলের পরিমাণ অত্যধিক হয়, তাহলে ডাক্তাররা জীবনযাত্রা পরিবর্তন করার (যেমন—কম চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা, ধূমপান কমানো বা বন্ধ করা) নির্দেশ দেন। শুধু জীবনযাত্রার পরিবর্তন কোলেস্টেরল না কমাতে পারলে ডাক্তাররা ওষুধ ব্যবহার করেন।




কোলস্টেরল কমানোর ঊপায় ০১





হৃদরোগ বা হার্টের যেকোনো রোগের অন্যতম প্রধান কারণ দেহে কোলেস্টেরলের আধিক্য, অত্যধিক দুশ্চিন্তা ও অতিমাত্রায় চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ। ডিমের কুসুম, যকৃত, মস্তিষ্ক, চর্বিযুক্ত গোশত, দুগ্ধ, চিংড়ি প্রভৃতিতে প্রচুর পরিমাণে কোলেস্টেরল রয়েছে। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে তা ধীরে ধীরে হৃদরোগের সৃষ্টি করে। কোলেস্টেরল রক্তকে ভারী করে এবং কৌশিক জালিকার গায়ে জমা হয়ে নালীপথ সরু করে দেয়। ফলে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয় ও প্লাক তৈরি করে। এতে রক্ত চলাচল বìধ হলে হৃদযন্ত্রের কিছু অংশ নষ্ট হয়ে যায় এবং হৃৎপিণ্ডের কার্য বìধ হয়ে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।তাই দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি। কোলেস্টেরল দেহে নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই সহজ। প্রয়োজন শুধু সচেতনতা। তেল বা চর্বি জাতীয় খাদ্য খুবই মুখরোচক, কিন্তু এগুলোই শরীরের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। তেল জাতীয় বা ভাজাপোড়া জিনিস কম খাওয়া, চিংড়ি, ডিমের কুসুম প্রভৃতি খাবার এড়িয়ে চলা। এর পরিবর্তে দৈনিক খাদ্য তালিকায় একটু করে হলেও আঁশ জাতীয় খাবার খাওয়া। যেমন ইসুবগুলের ভুসি, কচুর লতি, ডাঁটা, বিভিন্ন শাক প্রভৃতি। এগুলো রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। ইন্টারনেট।





কোলস্টেরল কমানোর ঊপায় ০২





ডা. এ.আর.এম সাইফুদ্দীন একরামআপনার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কত? আপনি যদি পাঁচ বছর আগে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা দেখে থাকেন এবং সেটার পরিমাণ স্বাভাবিক ছিল বলে আনন্দিত হন; তাহলে কিন্তু ভুল হবে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। চিকিৎসকগণ বলেন যাদের বয়স কুড়ি বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি তাদের রক্ত প্রতি পাঁচ বছরে অন্তত একবার পরীৰা করে দেখা উচিত।
কারও রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা যদি ২০০ মিগ্রা./ডেসিলিটারের বেশি হয় কিংবা কম ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন কোলেস্টেরলের (ৰতিকর কোলেস্টেরল) মাত্রা ১০০ মি.গ্রা/ডেসিলিটারের বেশি হয় তাহলে এগুলোর পরিমাণ কমানো উচিত। সাধারণত জীবনাচরণ পদ্ধতি পরিবর্তন করে এবং প্রয়োজন হলে ওষুধ সেবন করে ছয় সপ্তাহের মধ্যে এগুলোর পরিমাণ স্বাভাবিক অবস্থায় নামিয়ে আনা যায়।
রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখা তেমন কোন কঠিন কাজ নয়। এ জন্য যে কেউ নিচের এগারোটি সহজ কৌশল অনুসরণ করে উপকৃত হতে পারেন।
১. প্রথমে কোলেস্টেরলের কাঙ্ৰিত মাত্রা ঠিক করম্নন।আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে আপনার শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কত এবং আপনি কতটুকু কমাতে চান। এটা অনেকগুলো উপাদানের ওপর নির্ভর করে। যেমন পরিবারের বাবা-মায়ের হৃদরোগের ইতিহাস আছে কি না এবং আপনার হৃদরোগ হওয়ার মতো ঝুঁকি রয়েছে কিনা যেমন_ উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপানের অভ্যাস, অতিরিক্ত মেদ-ভুঁড়ি ইত্যাদি। যাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি তাদের কম ঘনত্বের কোলেস্টেরল বা ৰতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা ৭০ মি.গ্রা./ডেসিলিটারের নিচে থাকা উচিত। আর যাদের হৃদরোগের কোন ঝুঁকি উপাদান নেই তাদের ১৬০ মি.গ্রা./ডেসিলিটারের নিচে রাখা যেতে পারে। আজ-কাল যাদের হৃদরোগের ঝুঁকি রয়েছে তাদের ৰতিকারক কোলেস্টেরল যত শীঘ্রই কমানো যায় ততই মঙ্গল বলে মনে করা হয়।২. প্রয়োজন হলে ওষুধ সেবন করতে হবে।যাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি তাদের অবশ্যই জীবনাচরণ পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু যদি হৃদরোগের নমুনা থাকে তাহলে কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ সেবন করতে হবে। এ সকল ৰেত্রে ধূমপান পরিহার করা এবং ওজন কমানো যেমন জরম্নরী তেমন ওষুধ সেবন করাও দরকার। জীবনাচরণ পদ্ধতির পাশাপাশি কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ সেবন করলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা দ্রম্নত স্বাভাবিক হয়ে আসে। চিকিৎসকগণ কোলেস্টেরল কমানোর জন্য নানা রকম ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন। যেমন_নিয়াসিন ফাইব্রেটস, স্টেটিনস ইত্যাদি। বর্তমান সময়ে স্টেটিন জাতীয় ওষুধ বেশি জনপ্রিয়। স্টেটিন রক্তের ৰতিকারক কোলেস্টেরল ২০%-৫০% কমাতে পারে।
৩. হাঁটুন এবং ব্যায়াম করম্নন।শারীরিক পরিশ্রম এবং ব্যায়াম শুধু রক্তে ৰতিকারক কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় তাই নয়, উপকারী কোলেস্টেরলের পরিমাণ (বেশি ঘনত্বের লিপ্রোপ্রোটিন কোলেস্টেরল) ১০% বাড়ায়। মাঝারি পরিমাণ ব্যায়াম কিংবা জোরে জোরে হাঁটলেও এমন উপকার পাওয়া যায়। এ জন্য সকল চিকিৎসকের পরামর্শ নৈশভোজের পরে কমপৰে ৪৫ মিনিট হাঁটুন। কেউ যদি প্রতিদিন দশ হাজার সিঁড়ি বেয়ে ওঠা-নামা করেন তাহলে উপকৃত হবেন। আর কেউ যদি অফিসে চাকরি করেন তার উচিত প্রতি ঘণ্টায় পাঁচ মিনিট হাঁটা চলাফেরা করা। আপনি যে ধরনের ব্যায়াম করেন না কেন তা নিয়মিত করতে হবে। সপ্তাহে সাত দিন ব্যায়াম করতে পারলে তো খুবই ভাল। অন্যথায় কমপৰে পাঁচ দিন ব্যায়াম করতে হবে।
৪. চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করম্নন।কোলেস্টেরল কমানোর একটি সহজ উপায় হচ্ছে ডিমের কুসুম এবং অন্যান্য বেশি কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার পরিহার করা। তবে এটাও ঠিক যে, খাবারের কোলেস্টেরলই রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ানোর জন্য শুধুমাত্র দায়ী নয়। মানুষের শরীরের মধ্যে প্রতিদিন কোলেস্টেরল তৈরিও হয়ে থাকে। যে সকল খাবারে সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ বেশি সে সকল খাবারই রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। এ জন্য সম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার যেমন মাখন, চর্বিযুক্ত গরম্ন ও খাসির মাংস ইত্যাদির পরিবর্তে অসম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার যেমন সয়াবিন তেল, সূর্যমুখী তেল, জলপাইয়ের তেল, মাছ ইত্যাদি বেশি খাওয়া উচিত।
৫. অাঁশযুক্ত খাবার বেশি করে খান।যে কোন ধরনের সবজি এবং ফলমূল শরীরের জন্য উপকারী। এরা রক্তে কোলেস্টেরলও কমায়। বিশেষত দ্রবনীয় অাঁশ পরিপাক নালী থেকে স্পঞ্জের মতো কোলেস্টেরল শুষে নেয়। শিম, বার্লি ও ওট ইত্যাদি জাতীয় খাবারে প্রচুর অাঁশ থাকে।৬. বেশি করে মাছ খান।মাছ এবং মাছের তেল কোলেস্টেরল কমাতে পারে। এর ভেতরে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এ্যাসিড থাকে। এটা খুব সহজে রক্ত থেকে কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য ৰতিকর চর্বি কমিয়ে ফেলে। প্রত্যেকেরই সপ্তাহে অনত্মত দুই থেকে তিনবার মাছ খাওয়া উচিত। অধিকাংশ মাছেই ওমেগা-৩ ফ্যাটি এ্যাসিড থাকে। যদি কেউ মাছ খেতে না পারেন তিনি মাছের তেল থেকে তৈরি ওমেগা-৩ ফ্যাটি এ্যাসিডসমৃদ্ধ ক্যাপসুল চিকিৎসকদের পরামর্শ মোতাবেক সেবন করতে পারেন। বিভিন্ন উদ্ভিদজাত খাবারেও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এ্যাসিড পাওয়া যায়। যেমন-সয়াবিন তেল, কাঠ বাদামের তেল ইত্যাদি।৭. মদ্যপান পরিহার করম্নন।অতিরিক্ত এ্যালকোহলযুক্ত পানীয় পান শরীরের জন্য ৰতিকর। অতএব, অতিরিক্ত মদ সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে।
৮. গ্রীন টি সেবন করম্নন।বিভিন্ন পর্যবেৰণে দেখা যাচ্ছে যে, সবুজ চা (গ্রীন টি)-এর ভিতরে রক্তের ৰতিকারক কোলেস্টেরল কমানোর উপাদান রয়েছে। সবুজ চা সেবন হৃৎপি-ের জন্য উপকারী।৯. বাদাম খান।বিভিন্ন পর্যবেৰণে প্রমাণিত হয়েছে যে, বাদাম খেলে রক্তের কোলেস্টেরল কমে। বিশেষত কাঠ বাদাম এবং কাজু বাদাম উপকারী। বাদামে প্রচুর ক্যালরি রয়েছে। এজন্য পরিমিত পরিমাণে বাদাম খাওয়া উচিত।
১০. ধূমপান পরিহার করম্নন।ধূমপান করলে রক্তে উপকারী কোলেস্টেরল বা বেশি ঘনত্বের কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায়। অতএব, রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে অবশ্যই ধূমপান ছেড়ে দিতে হবে।
১১. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। অতএব, রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে হলে অবশ্যই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে।রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল থাকা শরীরের জন্য ৰতিকর। আমাদের সকলের উচিত কোলেস্টেরল সম্পর্কে জানা। উপরের এগারোটি সহজ কৌশল মেনে চললে আমরা রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারব। প্রয়োজনে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লেখক : অধ্যাপক (চলতি দায়িত্ব) ও বিভাগীয় প্রধান,মেডিসিন বিভাগরাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ, রাজশাহী।





কোলস্টেরল কমানোর ঊপায় ০৩





জন্মমুহূর্তে মুখে মধু দেয়ার বিষয়ে ডাক্তারের কড়া নিষেধাজ্ঞা অনেকেই মানছেন। তবে সারা জীবন মধু খেতে আপত্তি নেই। গবেষণা বলছে, মধু ও বাদামে রয়েছে ফল এবং সবজির সব গুণাগুণ, যা শরীরে কোলেস্টেরল রুখতে সাহায্য করে। অন্য একটি গবেষণা বলছে, কাজু বাদামও কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।কলা কমায়স্ট্রোকের ঝুঁকিযাদের খাদ্য তালিকায় পটাশিয়ামের মাত্রা কম তাদের ক্ষেত্রে স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। আমেরিকান মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত এক প্রবìেধ বিজ্ঞানীরা এ কথা জানান। তবে এ ঝুঁকি অনেকটা কমানো সম্ভব প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পটাশিয়ামসমৃদ্ধ ফল কলা সংযোগ করে।যমজ শিশু জন্মে ঝুঁকিযমজ শিশু জন্ম নেয়ার সময় সিজারিয়ান অপারেশনকে শ্রেয় মনে করছেন ডাক্তাররা। ভূমিষ্ঠ দ্বিতীয় শিশুটির ওপরই চাপ পড়ে। যুক্তরাজ্যের ডাক্তাররা তথ্য প্রমাণসাপেক্ষে বলেছেন, স্বাভাবিক জন্মপ্রক্রিয়ায় যে সময় এবং জটিলতা দেখা দিতে পারে তার পুরো সমস্যা গিয়ে দ্বিতীয় শিশুটির ওপর পড়ে। এমনকি দ্বিতীয় শিশুর ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি আট গুণ বেশি।স্মৃতিভ্রম রুখবে মাছব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, যারা সপ্তাহে অন্ততপক্ষে একবারো মাছ খান তাদের ক্ষেত্রে অ্যালঝাইমার বা স্মৃতিভ্রমসংক্রান্ত ঝুঁকি তিন ভাগ কমে যায়।

*-* পুরুষের দুর্বলতার এ টু জেড



পুরুষের দুর্বলতা বলতে যৌন অক্ষমতা বা যৌন আচরণে অতৃপ্তি, যৌন অসন্তোষ ইত্যাদি বোঝানো হয়ে থাকে। মূলত যৌন আচরণের যে দিকটি পুরুষের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর তা হলো পুরুষাঙ্গ বা লিঙ্গের উত্থানে ব্যর্থতা। এটিকে আমরা অনেক সময় ইরেকটাইল ডিসফাংশন বলে থাকি। অবশ্য মেডিকেল টার্ম হিসেবে একে ইম্পোটেন্স বা পুরুষত্বহীনতাও বলা হয়ে থাকে। একজন পুরুষ যখন যৌন সঙ্গম বা যৌনমিলনের জন্য মনোশারীরিকভাবে প্রস্ততি লাভ করে তখন যদি তার লিঙ্গ বা পুরুষাঙ্গ সঙ্গমের জন্য উপযুক্তভাবে উত্থিন না হয় তবে তা তার জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক। সন্তোষজনকভাবে সেক্স করার জন্য ইরেকশন বা লিঙ্গের পর্যাপ্ত উত্থান একটি বাধ্যতামূলক আচরণ। এর ফলশ্রুতিতে পুরুষের যৌন আগ্রহ বা যৌন ইচ্ছার যেমন ঘাটতি দেখা যায় তেমনি চরমপুলক অনুভূতি লাভও তার ভাগ্যে জোটে না। যে পুরুষ এর ভুক্তভোগী তিনিই কেবল জানেন এর কেমন মর্মপীড়া। অথচ মেডিকেল স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে পুরুষত্বহীনতার অনেক আধুনিক কার্যকারী চিকিৎসা রয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে,ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা লিঙ্গ উত্থানজনিত নানা সমস্যা যে কোনো বয়সের পুরুষের ক্ষেত্রেই হতে পারে। হঠাৎ করে দুই একবার লিঙ্গ উত্থিন না হওয়া কোনো বড় সমস্যা নয় এটি আপনাআপনি দূর হয়ে যায়।
ফিজিশিয়ানরা সাধারণত ইম্পোটেন্স বা পুরুষত্বহীনতার টার্মটির পরিবর্তে ইরেকটাইল ডিসফাংশন টার্মটি বেশি ব্যবহার করে থাকেন , কেননা এটি ইম্পোটেন্সির চেয়েও অনেক ব্যাপক অর্থ বহন করে। পুরুষের যৌন কর্মের মানে যে কেবলমাত্র পুরুষাঙ্গের ইরেকশন বা উত্থান হওয়া তা কিন্তু নয় এর সঙ্গে মনোগত এবং আবেগজনিত অনেক ফ্যাক্টরই জড়িত। পুরুষত্বহীনতা শব্দটির সঙ্গে যেহেতু অনেক নেতিবাচক ধারণা জড়িত তাই ইরেকটাইল ডিসফাংশন টার্মটি আমরা ব্যবহার করব। শারীরিক বা দৈহিক নানা কারণে যেমন লিঙ্গ উত্থানে সমস্যা হতে পারে ঠিক তেমনি মানসিক সমস্যার কারণে বা আবেগজনিত বা সাইকোসেক্সুয়াল (মানসিক যৌন সমস্যা) ইত্যাদির কারণেও পুরুষত্বহীনতা হতে পারে। যে কারণেই হোক না কেন ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয় হচ্ছে সবার আগে। সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার জন্য পুরুষত্বহীনতার জন্য উপযুক্ত কারণ খুজে বের করে তবেই তার চিকিৎসা করতে হবে। এ নিবন্ধে আমরা লিঙ্গ উত্থানজনিত নানা সমস্যা যেমন-
■কেন হয়?■এসমস্যার কি কি উপসর্গ রয়েছে?■কখন এ সমস্যা বেশি হয়?■কোন কোন ক্ষেত্রে এ সমস্যার ঝুঁকি বেশি থাকে?■কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত?■ইরেকটাইল ডিসফাংশনের জন্য কি কি পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন?■এর আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা?■এটি কি ভাবে প্রতিরোধ করবেন?■প্রচলিত মেডিকেশন/ওষুধ?■সার্জারির মাধ্যমে চিকিৎসা এবং অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোকপাত করব?লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যার কারণ-
ইরেকশন প্রবলেমের জন্য মূলত দুই ধরনের কারণ দায়ী। ফিজিক্যাল বা শারীরিক কারন-
(এটি সাধারণত রক্তনালী সম্পর্কীয় বা নার্ভের সাথে সম্পর্কিত) সাইকোলজিক্যাল বা মনোগত কারণ ঃ- নানা ধরনের মানসিক বিকারজনিত কারণে পুরুষত্বহীনতা অনেকক্ষেত্রেই ঘটে থাকে।
আবার অনেকের লিঙ্গ উত্থানজনিত নানা সমস্যার পেচনে রক্তনালী, লার্ভ বা স্নায়ু, নানা ধরনের সাইকোলজিক্যাল বা মানসিক কারণজনিত ফ্যাক্টর দায়ী থাকতে পারে।
শারীরিক নানা কারণের মাঝে রয়েছে দীর্ঘ মেয়াদি অসুস্থতা, ইনজুরি বা আঘাত, অপারেশনজানত কারনে জটিলতা যেমন-প্রস্টেট সার্জারিজনিত সমস্যা ইত্যাদি। এসকল সমস্যার কারণে পেনিসে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্নায়ুবিক সংবেদী তাড়না ও রক্তপ্রবাহ বিঘ্নতা ঘটে থাকে। এখানে একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন ইরেকশন হলো এক ধরনের ভাসকুলার বা রক্তনালীতে পর্যাপ্ত রক্ত সংবহনজনিত ঘটনা। যদি স্নায়ুতন্ত্র যৌনশিহরণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সিগন্যাল বা সংকেত পাঠাতে না পারে তাহলে পেনিসের রক্তনালীগুলোতে ইরেকশনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণে রক্ত আসে না ফলে লিঙ্গ উত্থান ঘটে না। গবেষণা সমীক্ষায় প্রতীয়মান হয়েছে যে, শতকরা ৪৮ ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষত্বহীনতার মূল কারণ ভাসকুলারবা রক্তনালী সম্বন্ধীয় নানা সমস্যা শতকরা ১৪ ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষত্বহীনতার ক্ষেত্রে নার্ভকে দায়ী করা হয়েছে। নানা ধরনের নিউরোলজিক বা স্নায়ুবিক সমস্যার কারণে যৌন অক্ষমতা ঘটতে পারে।
শতকরা ৩ ভাগ ক্ষেত্রে পেনিসের কাঠামো অথবা এর পার্শ্ববর্তী কোষকলাকে ইরেকশনের প্রবলেমের জন্য দায়ী করা হয়েছে।
কতক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াজনিত কারণে যেমন-যারা উচ্চ রক্তচাপবিরোধী ওষুধ সেবন বা করছেন বিষন্নতাবিরোধী ওষুধ সেবন করছেনতাদের ক্ষেত্রেও সাময়িক যৌন অক্ষমতা ঘটাতে পারে।
হরমোনাল ফ্যাক্টরস বা হরমোনের তারতম্যজনিত কারণে পুরুষত্বহীনতা শিকার অনেকেই হতে পারে।
জিষ্কের স্বল্পতাজনিত কারণে অনেকের পুরুষত্বহীনতা হতে পারে। সাধারণত শতকরা ৫০ ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষত্বহীনতার কারণ হিসেবে শারীরিক অসুস্থতাগুলোকেই দায়ী করা হয়ে থাকে। দৈহিক বা শারীরিক অসুস্থতার জন্য যেমন ইরেকশন বা লিঙ্গ উত্থানের সমস্যা হতে পারে। ঠিক তেমনি মনোগত নানা সমস্যায়ও যৌন অক্ষমতা হতেই পারে। এগুলোর মাঝে রয়েছে ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা এ্যাংজাইটি বা দুশ্চিন্তা, মনোদৈহিক চাপ বা স্ট্রেস, দীর্ঘমেয়াদি অনুশোচনাবোধ অথবা নারী-পুরুষের আন্তঃসম্পর্কজনিত নানা সমস্যা। এসকল নানা সমস্যায় যৌন সঙ্গম বা যৌনমিলনের সময় পুরুষ একটু অন্যমনস্ক হয়ে থাকে ফলে স্বাভাবিক যৌনতার জন্য যে শিহরণ লাভ করা উচিত তার মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কমে যায়। ফলে ইরেকশন বা লিঙ্গ উত্থান ঘটে না।
সাইকোলজিক্যাল নানা সমস্যার জন্য শতকরা ৪০ ভাগেরও বেশি ক্ষেত্রে ইরেকশন বা লিঙ্গ উত্থানে সমস্যা হয়:যেসব পুরুষের বয়স ৫০ বছরের নিচে তাদের ইরেকশন বা লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যার মূল কারণ সাইকোলজিক্যাল বা মানসিক সমস্যা।নারী – পুরুষের মাঝে আন্তঃসম্পর্কজনিত নানা দ্বন্দ্ব ,দাম্পত্য কলহ দুজনের সাঝে অন্তরঙ্গ সম্পর্কের অনুপস্থিতি,একজন আরেকজনের নিকট নানা ব্যক্তিগত বিষয় গোপন করা ইত্যাদি নানা কারণে যৌন পার্টনারদের মাঝেও নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার এটাও ঠিক যে, কোনো পুরুষ যদি নির্দিষ্ট কোনো নারীর প্রতি যৌন আগ্রহ বা যৌন ইচ্ছা হারিয়ে ফেলে তার ক্ষেত্রেও ইরেকশনের সমস্যা হতে পারে। যে পুরুষের হঠাৎ করে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে তারও লিঙ্গ উত্থানে সমস্যা হতে পারে।
কতক পুরুষের আবার স্ত্রীর প্রথম সন্তান জন্মের পর সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্সে কতক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যার নানা উপসর্গপুরুষের পুরুষঙ্গ যখন উত্থিত না হয় তখন লিঙ্গ সম্পর্কীয় কতক উপসর্গ দেখা দিয়ে থাকে। এগুলো হলোঃ
■পুরুষ ইচ্ছা করলে পার্টনারের উপস্থিতিতে বা অনুপস্থিতিতে লিঙ্গ উত্থান ঘটাতে পারে না। এর মানে হলো পুরুষ যদি পার্টনারের অনুপস্থিতিতে হস্তমৈথুন করতে চায় তথাপিও তাদের লিঙ্গ উত্থিত হয় না।■একবার ইরেকশন বা লিঙ্গ উত্থান হলেও উত্থানজনিত অবস্থা একেবারে ধরে রাখতে না পারা। এর ফলে লিঙ্গ একবার শক্ত হলেও একটু পরে আবার আগের মত স্বাভাবিক নরম অবস্থায় চলে যায়■যৌন সঙ্গম বা ইন্টারকোর্সের সময় সঙ্গমকে পরিপূর্ণতা দান করতে বা সঙ্গমে সন্তুষ্টি লাভ করতে যে পরিমাণ ইরেকশনের প্রয়োজন তা না হওয়া।■যৌন আগ্রহ বা যৌন ইচ্ছা ইত্যাদিতেও ঘাটতি দেখা দিতে পারে।■পুরুষের চরমপুলকজনিত ব্যর্থতা এবং বীর্যস্খলনজনিত নানা সমস্যাও একই সঙ্গে বিরাজ করতে পারে।কখন এ সমস্যা বেশি হয়বেশিরভাগ পুরুষের প্রফেশনাল বা হঠাৎ করে দু-একবার লিঙ্গ উত্থানের সমস্যা হতে পারে। কিন্তু এই লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যা যখন দীর্ঘমেয়াদি রূপ লাভ করে এবং অব্যাহত থাকে তখনই তা ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের ওপরে এবং ব্যক্তির যৌন জীবনে নানা ধরনের শষ্কা ও নেতিবাচক অনুভূতির জন্ম দেয়। এখানে একটি কথা বিশেষভাবে বলা দরকার একবার যাদের লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যা হয়ে পড়ে তারা বারবার মনে করতে থাকে পরের বার যৌনমিলনে সমস্যাটি বুঝি আবার হবে এই অতিরিক্ত আগাম যৌন দুশ্চিন্তার কারণে যৌনমিলনের সময় লিঙ্গ উত্থান নাও ঘটতে পারে একে আমরা বলি পারফরমেন্স এ্যাংজাইটি। এই এ্যাংজাইটিজনিত কারণে সমস্যা অনেক বেড়ে যেতে পারে। আবার অনেক পুরুষ রয়েছে যাদের যৌন সঙ্গমকালীন সময়ে লিঙ্গ ঠিকই উত্থিত হল কিন্তু বর্ধিত যৌন চাপের কারণে সাথে সাথেই বীর্যস্খলিত হয়ে গেল। এরও মূল কারণ এ্যাংজাইটি, এটাকে বলে প্রি-ম্যাচিউর ইজাকুলেশন। আবার কতক পুরুষ রয়েছে যাদের সন্তোষজনক যৌন সঙ্গমের জন্য অনেকক্ষণ লিঙ্গকে যোনির ভেতরে ক্রমাগতভাবে ঢুকাতে এবং বের করতে হয়। অনেকের ক্ষেত্রে এটি পুরুষাঙ্গে ব্যথার উদ্রেক করতে পারে। যেহেতু এ ধরনের পুরুষদের ইজাকুলেশন বা বীর্যস্খলনে অনেক সময় প্রয়োজন হয় তাই তারা এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কেননা বীর্যস্খলিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এরা চরমপুলক লাভ করতে পারে না।
এত কিছুর পরেও সৌভাগ্যের কথা এই যে, পুরুষত্বহীনতা বা যৌন অক্ষমতার জন্য শারীরিক ও মানসিক যে কারণেই দায়ী হোক না কেন উপযুক্ত এবং বর্তমানে প্রচলিত আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়।
কোন কোন ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি থাকেঅনেকগুলো মেডিকেল ফ্যাক্টর রয়েছে যেগুলো পুরুষের মাঝে উপস্থিত থাকলে যৌন অক্ষমতা বা পুরুষত্বহীনতার ঝুঁকি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বাড়ে। একটু আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, পুরুষত্বহীনতার জন্য রক্তনালী সম্পর্কীয় নানা অসুখ বা øায়ুবিক বা নার্ভ সম্পর্কীয় অসুখ ইত্যাদি দায়ী থাকতে পারে। যেসকল শারীরিক কারণে পুরুষত্বহীনতার
ঝুঁকি বাড়ে সেগুলোর কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলঃডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগঃ যেসকল পুরুষের ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ রয়েছে তাদের অনেকেই পুরুষত্বহীনতায় ভুগে থাকে। গবেষণা সমীক্ষায় প্রতীয়মান হয়েছে যে ডায়াবেটিস রোগ নির্ণীত হওয়ার ৫ বছরের ভেতরে প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ ক্ষেত্রে পুরুষত্বহীনতার অভিজ্ঞতা লাভ করে।উচ্চ রক্তচাপঃ-যেসকল পুরুষ উচ্চ রক্তচাপে ভোগে তাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রক্তনালীর ভেতরের লুমেন্ট বা গহ্বরে কোলেস্টেরল জাতীয় পদার্থ জমা হয়ে ভেতরে স্পেস বা জায়গা কমিয়ে দেয়। ফলশ্র“তিতে পর্যাপ্তপরিমাণ রক্ত এর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে না। এ কারণেও ইরেকশন সমস্যা দেখা দিতে পারে:
■রক্তনালী সম্পর্কীয় অসুখ।■স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ।■রক্তে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল বিশেষত অল্প ঘনত্বমাত্রার কোলেস্টেরল এখানে উল্লেখ্য যে, যেসকল কোলেস্টেরল বেশি ঘনত্বের মাত্রার হয়ে থাকে সেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো ।■যৌন অঙ্গগুলোর স্বাভাবিক বিকাশ এবং কার্যকারীতার জন্য যেসকল হরমোনের প্রয়োজন সেগুলোর লেবেল যদি কম থাকে এ মেডিকেল জটিলতাটিকে আমরা বলি হাইপোগনাট ডিজাম। এর ফলে রক্তে টেস্টোস্টেরন হরমোনের লেবেলে আশষ্কাজনকভাবে কমে যায়। ফলশ্র“তিতে ইরেকশনে নানা ধরনের সমস্যার হতে পারে।■থাইরয়েড গ্রন্থি বা গ্ল্যান্ডের নানা ধরনের সমস্যার জন্য ইরেকশনে সমস্যা হতে পারে।■মাল্টিপল ক্লোরোসিস নামক স্নায়ুবিক অসুখটিতেও পুরুষত্বহীনতা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।■পেনিস বা পুরুষাঙ্গের কোনো ধরনের আঘাত বা শ্রোণী চক্রের কোনো ধরনের ইনজুরির জন্য এ সমস্যা হতে পারে।■পেলভিস বা শ্রোণী চক্রের সার্জারি বা অস্ত্রোপচার।■রেডিয়েশন ট্রিটমেন্ট বা রঞ্জনরশ্মির সাহায্যের চিকিৎসা■উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যেসকল ওষুধ সেবন করা হয় তাদের কতকগুলোতে যৌন অক্ষমতা দেখা দিতে পারে।■এন্টিডিপ্রেসেন্ট বা বিষন্নতারোধী কতক ওষুধ সেবনেও ইরেকশনের সমস্যা হতে পারে।■ডাইইউরেটিক বা মূত্রবর্ধক ওষুধ সেবনেও সাময়িকভাবে ইরেকশনের সমস্যা হতে পারে।■যারা দীর্ঘমেয়াদি এ্যালকোহল এবিউজ বা মদ্যপান করে থাকেন তাদের কতকের যৌন অক্ষমতা দেখা দিতে পারেশ■ড্রাগ এডিক্স বা মাদকাসক্তের মাঝেও যৌন অক্ষমতার প্রবণতা অপেক্ষাকৃত বেশি।■যারা অতিমাত্রায় ধূমপান করেন তাদের ক্ষেত্রেও পুরুষত্বহীনতা বিরল ঘটনা নয়।এতক্ষণ আমরা পুরুষত্বহীনতা যেসব শারীরিক কারণে ঘটে সেগুলোর কথা বললাম এবার আসা যাক সাইকোলজিক্যাল বা মনোগত কি কি সমস্যায় ইরেকশনের ঝুঁকি বাড়ে।
ডিপ্রেশন বা বিষন্নতাঃ
■এ্যাংজাইট বা দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগরোগ।■আন্তঃসম্পর্কজনিত দ্বন্দ্ব সমস্যা(রিলেশনশিপ প্রবলেম)।■সাম্প্রতিক জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তী যেমন-বাচ্চার জন্মদান, চাকরি থেকে অবসর গ্রহন, চাকরি পরিবর্তী, কোনো অন্তরঙ্গ পার্টনারকে হারানো, অন্তরঙ্গ পার্টনারের মৃত্যু, বিবাহ বিচ্ছেদ ইত্যাদি কারণেও ইরেকশনের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন-
ইরেকশন বা লিঙ্গ উত্থানে সহায়তা করে এরকম কোনো মেডিকেশন বা ওষুধ সেবনে (ইনজেকশন বা অন্য কোনো ওষুধ) চার ঘন্টার চেয়ে বেশি স্থায়ীভাবে ইরেকশন থাকে তবে জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
নিন্মোক্ত মেডিকেল জটিলতায় ইরেকশনের সমস্যা হতে পারেঃ
■পা, পশ্চাদদেশে বা পেনিসে অথবা শুক্রাশয়ে কোনো ধরনের ইনজুরি ।■যৌনঙ্গ এলাকায় চুল বা বগলের নিচে হঠাৎ করে চুলের পরিমানে হ্রসি পেলে এবং স্তরের বৃদ্ধি ঘটলে। ওপরের জটিলতাগুলোতে ফিজিশিয়ানের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত জরুরি।■যদি এক থেকে দুই সপ্তাহের মাঝে শতকরা ২৫ ভাগ ক্ষেত্রে আপনার ইরেকশন না হয় এবং সাথে নিচের উপসর্গ বা লক্ষণগুলো থাকে তাহলেও ভালো ফিজিশিয়ানের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।■ইরেকশনের সমস্যাটি যদি পশ্চাদদেশে অবিরত ব্যথাসহকারে হয়ে থাকে।■লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যা যদি নতুন কোনো ওষুধ সেবনজনিত কারণে অথবা ওষুধের ডোজের পরিবর্তনজনিত কারণে হয়ে থাকে।■যে কোনো ধরনের সমস্যা যাতে আপনার আত্ম ইমেজ পরিবর্তিত হয়/নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা জন্মে।পর্যাপ্ত পরিমাণ য্তন নেয়ার পরেও যদি সমস্যার কোনো সাবধান না ঘটেঃআপনার যদি ইরেকশন প্রবলেমের সাথে সমন্বিত হয় মূত্রতন্ত্র সম্পর্কীয় কোনো সমস্যা, তলপেটে ব্যথা বা পশ্চাদদেশের নিচের দিকে ব্যথা, জ্বর অথবা আঘাতজনিত কারণে অন্য কোনো উপসর্গ থাকে তাহলেও জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।
হঠাৎ করে দুই এবার ইরেকশন বা লিঙ্গ উত্থান না ঘটা সাময়িক হতে পারে। এটি আশা করা যায় ধীরে ধীরে অবস্থায় ফিরে যাবে। তাই এক্ষেত্রে আগেই ধারণা করা উচিত নয় যে, উত্থানজনিত সমস্যাটি আবারও ঘটবে যদি সম্ভব হয় তবে উত্থানজনিত যে সমস্যাটি ঘটেছিল সেটির কথা ভুলে যান এবং পরবর্তীতে আপনি আরো সুখকর যৌনানুভূতি লাভ করবেন মনে মনে এমন ধারণাটি পোষণ করুন। যৌন পার্টনারের সঙ্গে আপনার সমস্যা নিয়ে, যৌন আচরণে আপনার কোনো ভয়-ভীতি বা দুশ্চিন্তা থাকলে একেবারে খোলামেলা আলাপ-আলোচনা করুন। এতে অনেক বিষয়ে ডাক্তারের সাহায়তা ব্যতীত একটি ভালো পারস্পারিক সমঝোতায় পোঁছানো যায়।
যদি দুই সপ্তাহের ভেতরে আপনাদের সমস্যাটির সমাধান না হয় এবং প্রতি চারবারে একবার করে ইরেকশনের সমস্যা হয় তবে এ বিষয়ে কোনো প্রফেশনাল বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত। একটি গবেষণা সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, অনেক পুরুষ তাদের পুরুষত্বহীনতা বা যৌন অক্ষমতার বিষয়টি সেক্স পার্টনারের নিকট কৌশলে এড়িয়ে যেতে চান এবং অনেকদিন ভোগার পর গোপনে গোপনে ডাক্তারের পরামর্শ নেন। এ বিষয়ে সঠিক পরামর্শ হল আপনার যদি ইতিমধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ইরেকশন বা উত্থানজনিত সমস্যা থাকে তাহলে সবরকম লাজ লজ্জা ঝেড়ে আপনার সেক্স পার্টনারকে খুলে বলুন এবং প্রথমে একজন ই্উরোলজিস্ট ও তাতে কোনো শারীরিক কারণ খুঁজে না পাওয়া গেলে সাইকিয়াট্রিস্ট বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অতি সত্ত্বর নিন।
এ বিষয়ে কতক হেলথ প্রফেশনাল রয়েছে। যেমন- সাধারণ ফিজিশিয়ান, মেন্টাল হেলথ প্রফেশনাল। কতকক্ষেত্রে দেখ যায় যৌনতা বিষয়ক এবং ইরেকশন সম্পর্কিত নানা আলোচনায় তারা এসব প্রফেশনালদের সামনে এক ধরনের অস্বস্তি এবং অস্বাচ্ছন্দ্যবোধে ভুগে থাকে।ফলশ্র“তিতে তারা তাদের মূল যৌন সমস্যার কথা ডাক্তারের কাছে মুখ খুলে বলতে পারেন না। অবশ্য এটা ঠিক যে, ডাক্তার এবং রোগী উভয়ের কিছু ক্রটি বিচ্যুতি থাকতে পারে। অনেক সাধারণ ফিজিশিয়ানসহ মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন যারা নিজেরাও যৌনতা নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যভাবে খোলামেলা আলাপ-আলোচনা করতে পারেন না।
আপনার ইরেকশন প্রবলেম বা লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যা যদি সাইকোলজিক্যাল বা মানসিক সমস্যার কারণে হয়ে থাকে তবে আপনার নিম্নোক্ত হেলথ প্রফেশনালের পরামর্শ নেয়া উচিত।
■সাইকিয়াট্রিস্ট বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ■সাইকোলজিস্ট বা মনোবিজ্ঞানী■সেক্স কাউন্সিলর■কাপল বা মেরিটাল থেরাপিস্ট(দাম্পত্য সম্পর্কীয় বিশেষজ্ঞ)।ইরেকশন ডিসফাংশনে কি কি পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন-ইরেকশন বা লিঙ্গ উত্থানঘটিত সমস্যা দূরীকরণে প্রথমত যা দরকার তা হচ্ছে উত্থানে ব্যর্থতার সঠিক কারণ খুঁজে বের করা। একটু আগেই উল্লেখ করেছি সাইকোলজিক্যাল বা মনোগত কারণ এবং ফিজিক্যাল বা শারীরিক কারণ যে কোনটিতেই ইরেকশন সম্পর্কীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেহেতু মনোদৈহিক নানা কারন এর সঙ্গে জড়িত তাই এর সঠিক রোগ নির্ণয় একটু জটিল।
সঠিক মূল্যায়নের জন্য একজন অভিজ্ঞ হেলথ প্রফেশনাল সাধারণভাবে নিম্নোক্তভাবে এগিয়ে থাকেন-
■আপনার লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যা থাকলে তার সাথে সমন্বিত হয়ে কি কি ঝুঁকিজনিত ফ্যাক্টর রয়েছে তা খুঁজে বের করা।■আপনার সম্পূর্ণ সেক্সুয়াল বা যৌনতার ইতিহাস নেয়া।■সম্পূর্ণ শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা (বিশেষত পেট, পেনিস বা পুরুষাঙ্গ,প্রস্টেট বা পুরুষগ্রন্থি, রেক্টাম/মলাশয় এবং শুক্রাশয় ইত্যাদি।■রক্তের টেস্টোস্টেরন, প্রোলাক্টিন এবং থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করা।■ডায়াবেটিস রয়েছে কিনা রক্তের গ্লুকাজের মাত্রা ও প্রস্রাব পরীক্ষা করা।■নিদ্রাকালী লিঙ্গ উত্থান ঘটে কিনা এবং লিঙ্গ পর্যপ্ত পরিমাণে দৃঢ় থাকে কিনা তা পরীক্ষা করা। এটিকে পূর্বে স্ট্যাম্প টেস্ট বলা হতো।■বড় কোনো ধরনের সাইকোলজিক্যাল বা মনোগত কারণ রয়েছে কিনা তা জানার জন্য সম্পূর্ণ মানসিক বা সাইকোলজিক্যাল মূল্যায়ন পরীক্ষা করে দেখা দরকার।এসকল নানা পরীক্ষ-নিরীক্ষার মাধ্যমে ডায়াগনোসিস করা সম্ভবপর হবে আপনার পুরুষত্বহীনতার বা যৌন অক্ষমতার পেছনে মূলত কোন কারণেটি দায়ী। এর ওপর ভিত্তি করে আপনার ডাক্তার মেডিকেশন বা ওষুধ বা অপারেশন (শল্য চিহিৎসা) কোনটি নিতে হবে তা নির্ধারণ করবেন।
কতক পুরুষের আবার পেনিসে রক্তসংবহনকারী ধমনি এবং শিরা পরীক্ষা করতে হয়। এসব পরীক্ষা এক ধরনের ইন্ট্রাকেভার্নাস বা ইন্ট্রাইউরেথ্রাল ইনজেকশন দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
স্নায়ুতন্ত্র সম্পর্কীয় কোনো ধরনের জটিলতা রয়েছে কিনা তাও ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। আলট্রাসনোগ্রাফি এবং রক্তনালীর একটি পরীক্ষা যাকে এনজিওগ্রাফি বলে তার মাধ্যমে মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া যেতে পারে। পেনিসে সংবহনকারী রক্তনালীগুলোকে যদি মেরামত করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে তাহলে সার্জারির মাধ্যমে তা করা সম্ভবপর।
তবে এটা ঠিক যে, পুরুষত্বহীনতার সঠিক কারণটি খুঁজে বের করা একটি জটিল প্রক্রিয়া। এটি করার জন্য আজ পর্যন্ত সরাসরি কোনো স্ক্রিনিং টেস্ট বা পরীক্ষা আবিস্কৃত হয়নি।
ইরেকটাইল ডিসফাংশনে ট্রিটমেন্টঃলিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যা বা ইরেকশন প্রবলেমের জন্য নানা ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা রয়েছে তবে এটি নির্ভর করে পুরুষত্বহীনতা কি কারণে হল তার ওপর। যদি মনোগত কারণে লিঙ্গঘটিত সমস্যা হয় তবে মনোরোগ বিশেষজ্ঞই এর সঠিক চিকিৎসা করতে পারে। শারীরিক বা ফিজিওলজিক্যাল কারণে যদি ইরেকশন সম্পর্কীয় সমস্যা হয় তাহলে তার মূল চিকিৎসা করেন ইউরোলজিস্ট বা মূত্র ও জননতন্ত্র বিশেষজ্ঞ। কতক রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ইরেকশনের সাথে জড়িত রয়েছে মনোদৈহিক উভয় রকমের মেডিকেল জটিলতা। সেক্ষেত্রে সার্বিকভাবে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং ইউরোলজিস্টের তত্ত্বাবধানে একত্রে চিকিৎসা নেয়া বাঞ্ছনীয়।
শুরুতে আমার উল্লেখ করেছিলেন ডাক্তাররা ইম্পোটেন্স বা পুরুষত্বহীনতার পরিবর্তে ইরেকটাইল ডিসফাংশন টার্মটিকে বেশি উল্লেখযোগ্য মনে করেন। একজন পুরুষের যৌনক্রিয়া কেবলমাত্র পেনিসে ইরেকশন নয় এর সঙ্গে মনোদৈহিক নানা জটিলা যৌন আচরণ জড়িত। পুরুষত্বহীনতার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অনেকগুলো নেতিবাচক ধ্যান ধারণা।
চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অনেক দিক বিবেচনা করে দেখা হয় রোগীর বয়স কত, রোগের তীব্রতা কেমন, যৌনতা সম্পর্কে রোগীর দৃষ্টিভঙ্গি কেমন, যৌন পার্টনারের সাথে তার সম্পর্ক, তারা কি কি যৌন আচরণ করে থাকে, যৌন সঙ্গমের পূর্বে তারা সঙ্গম বহির্ভূত যৌন আচরণ করে কিনা ইত্যাদি সবকিছু মূল্যায়ন করে উপযুক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা প্রয়োগ করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডাক্তাররা চেষ্টা করেন ননসার্জিক্যাল বা অপারেশন না করে ওষুধ দিয়ে বা মানসিক কারণ দায়ী থাকলে সেক্স থেরাপি দিয়ে চিকিৎসা করতে। অগত্যা যদি সার্জারি অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়ায় সেক্ষেত্রে ইউরোলজিস্টরা শল্য চিকিৎসা করে থাকেন।
নানা ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার মধ্যে রয়েছে-
ইরেকশন বা লিঙ্গ উত্থানের জন্য কেভারজ্যাক্ট নামক ইনজেকশন অথবা মিউস নামক এক ধরনের পদার্থ যা পেনিসে ঢোকাতে হয় এগুলোর মাধ্যমে খুব সহজেই লিঙ্গ উত্থান ঘটে থাকে।
আপনি যদি কোনো ওষুধ সেবন করে থাকেন এবং ওষুধ সেবনজনিত কারণে ইরেকশনের সমস্যা দেখা দেয় তবে ডাক্তার আপনার জন্য ওষুধটি বদলিয়ে অন্য কোনো ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে পারেন।
■নানা ধরনের ভ্যাকুয়াম বা খালিকরণ সংকোচনক্ষম ডিভাইস দিয়ে চিকিৎসা।■পেনাইল ইমপ্ল্যান্টস(সার্জারির মাধ্যমে একপ্রকার চিকিৎসা)।মনোগত কারণে যদি আপনার পুরুষত্বহীনতা ঘটে থাকে তবে অবশ্যই আপনার প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ সেক্সুয়াল কাউন্সিলিং। অবশ্য ফিজিক্যাল ডিসঅর্ডারের জন্য যৌন অক্ষমতায় ভুগছে এমন অনেক পুরুষের জন্যও সাইকোথেরাপি বা আচরণগত চিকিৎসার গুরুত্ব অপরিসীম। প্রায় সময়ই দেখা যায় শারীরিক কারণের পাশাপাশি সাইকোলজিক্যাল পুরুষত্বহীনতার সাথে জড়িত থাকতে পারে।
তবে এটা ঠিক যে, ইরেকশন প্রবলেম বা লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যার সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করা এবং পরিমাপ করা যেহেতু জটিল তাই কোন চিকিৎসা পদ্ধতি কতটুকু কার্যকারী তার সঠিক পরিসংখ্যান এখনো পর্যন্ত নির্ধারিত হয়নি। তবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে গড়পড়তা হিসেবে দেখা গেছে ইনজেকশন দিয়ে চিকিৎসা শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে। তবে সাইকোলজিক্যাল চিকিৎসা যেহেতু দীর্ঘমেয়াদি তাই উচিত রোগীর পর্যাপ্ত ধৈর্য্যসহকারে মনোরগ বিশেষজ্ঞের সার্বিক তত্ত্বাবধানে থেকে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া।
অনেক পুরুষেরই আবার যৌনতার এই ব্যাপারটি নিয়ে একটু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে । তারা একবার লিঙ্গ উত্থান ঘটার পরেও সাবলীলভাবে যৌন সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারে না। পঠকদের জানার জন্য ভলা হয় যে, একবার যৌনসঙ্গম করার পর পুরুষের পেনিস কিছু সময়ের জন্য আপাত ঘুমন্ত অবস্থায় বিরাজ করে। এসময়ে লিঙ্গ উত্থত হয় না তাই এটিকে কেউ যদি যৌন অক্ষমতা মনে করেন তাহলে তিনি মারাক্তক ভুল করছেন। এই সময়টিতে সেক্স পার্টনারকে নিয়ে আউটার কোর্স বা সঙ্গম বহির্ভূত যৌন আচরণে যেমন- চুমু দেয়া, একজন অন্যজনকে অন্তরঙ্গভাবে জড়িয়ে ধরা,স্তনে এবং শরীরের নানা অংশে মেসেজ করা,মৃদু চাপ্পড় ইত্যাদি করতে পারেন। দেখা যাবে একটু সময় পেরিয়ে যাবার পর পেনিস ধীরে ধীরে আবার উত্থিত হবে। তাই পুরুষদের এ ব্যাপারটি নিয়ে মাথা না ঘামানোই উচিত। সেক্স থেরাপি বা সেক্সুয়াল কাউন্সিলিং এক্ষেত্রে যদিও পুরুষকে ঘিরে তথাপি সেক্স পার্টনারের সহযোগিতা এবং সক্রিয় অংশগ্রহণও একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। সেক্স পার্টনারের সঙ্গে কলহ, মনের মিল না থাকা,একজন অন্যজনকে তীব্রভাবে সন্দেহ করা, ঘৃণা,বিদ্বেষ,ক্ষোভ ইত্যাদি থাকলে অবশ্যই মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।
লিঙ্গ উত্থাজনিত সমস্যার প্রতিকার
লিঙ্গ উত্থানজনিত নানা সমস্যার প্রতিকারের ক্ষেত্রে প্রথমত বা করা দরকার তা হল অন্তরঙ্গ সম্পর্ক স্থাপন বা যৌনমিলনের পূর্বে রিলাক্সড বা শিথিল থাকা। যৌন দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলা। বিবাহের প্রারম্ভিক পর্যায়ে স্ত্রীর সঙ্গে নানা ধরনের যৌন আচরণে পুরুষের মনে অনেত ধরনের ভয়-ভীতি বিরাজ করতে পারে। তাদের উচিত সম্পর্কে স্বাচ্ছন্দ্য,সাবনীল এবং স্বাস্থ্যকর দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা। যৌনতা সম্পর্কে নেতিবাচক অনুভূতিগুলো এবং মনোভাবগুলো যৌন সম্পর্ক স্থাপনের পূর্বে ধীরে ধীরে মন থেকে সরিয়ে ফেলা দরকার। সেক্সূয়াল অন্তরঙ্গতা বা যৌনমিলনের পূর্বে স্ত্রীর সঙ্গে যৌন উত্তেজনাকর নানা ধরনের খোলামেলা আলাপচারিতা, সোহাগী ভঙ্গিতে স্ত্রীকে আদর করা এবং একে অপরের সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করা ইত্যাদি লিঙ্গ বা পেনিসের উত্থানকে দৃঢ় করবে।
যে কথাটি মনে রাখা প্রয়োজন তা হলো -যৌন আচরণ মানে কেবলমাত্র যৌন সঙ্গম নয়। এটি যৌন আচরণের একটি অংশ। আপনি এবং আপনার সেক্স পার্টনার যদি যৌনমিলনের পূর্বে প্রেম নিবেদনের সময় একে অপরের সঙ্গে খোলামেলা যৌন আলাপে এবং হাল্কামাত্রার হাসি-ঠট্রামূলক খেলাচ্ছলে যৌনক্রীড়া করেন তবে এটি আপানাদের স্ট্রেসবা মনোদৈহিক চাপ এবং যৌন দুশ্চিন্তা কমাতে অনেক সহায়তা করবে। এতে করে আপনি এবং আপনার পার্টনার যৌনমিরনের আগের চেয়ে অনেক বেশি সুখবর অনুভূতি সঞ্চার করতে পারে।
বয়োঃবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ইরেকশনে একটু সমস্যা হওয়া বা একবার ইরেকশন হওয়ারপর তা ধরে রাখা একটু কষ্টকর হতে পারে। তথাপি যৌনমিলনের পূর্বে ফোরপ্লে বা যৌনক্রীড়া বা যৌনক্রীড়া এবং যৌনমিলনের উপযুক্ত মানসিক পরিবেশ আপনার লিঙ্গ উত্থানকে অব্যাহত রাখবে।
লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যার মেডিকেশন বা ওষুধ-
যেসকল মেডিকেশন বা ওষুধের মাধ্যমে লিঙ্গ উত্থান ঘটতে পারে সেগুলো মূলত পুরুষত্বহীনতার মূল ডায়াগনোসিস বা কারণে ওপর নির্ভর করে। রক্তসংবহনতন্ত্র বা ভাসকুলার,হরমোনাল স্নায়ুতন্ত্র সম্পর্কীয় বা সাইকোলজিক্যাল (মনোগত কারণ) যে কারণে লিঙ্গ উত্থানে সমস্যা হয় এদের প্রত্যেকটিরই খুব ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা রয়েছে। আমরা দীর্ঘ চিকিৎসা জীবনে দেখেছি ওষুধ চিকিৎসা পাশাপাশি বেশিরভাগ রোগীকে সেক্সুয়াল কাউন্সিলিং(সাইকোথেরাপি) এবং সেক্স থেরাপি বেশ ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখে। অবশ্য এসব ক্ষেত্রে দৈহিক কারণের পাশাপাশি মানসিক কারণও দায়ী থাকতে পারে।
লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যাটি যদি ওষুধ সেবনজনিত কারণে হয়ে থাকে তবে আপনার ডাক্তার ওষুধের ডোজ পরিবর্তনের কথা ভাবতে পারেন অথবা ওষুধ বদলিয়ে অন্য কোনো গ্র“পের মেডিকেশন প্রেসক্রাইব করতে পারেন। ওষুধ সেবনজনিত কারণে যদি সাময়িকভাবে আপনার লিঙ্গ উত্থানে সমস্যা ঘটে তবে হুট করে ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত ওষুধ সেবন বন্ধ করে দেবেন না। প্রকৃত অর্থেই ওষুধ সেবনের জন্য এই সমস্যা হচ্ছে কিনা তা অভিজ্ঞ ডাক্তারই বলতে পারবেন।
ওষুধ দিয়ে চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হলঃ
■মেডিকেশন বা ওষুধজনিত কারণে ইরেকশন বা লিঙ্গ উত্থানের তারতম্য ঘটলে ওষুধ নতুন করে এডজাস্ট করতে হবে বা নতুন কোনো ওষুধ দিয়ে তাতে পরিবর্তন আনতে হবে।■ইরেকশন বা লিঙ্গ উত্থান ঘটাতে সহায়তা করে এমন ওষুধ দিয়ে পেনিস বা লিঙ্গে রক্ত প্রবাহ বাড়াতে হবে।■যৌনমিলনের পূর্বে লিঙ্গের উত্থান নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বিশেষত পারফরমেন্স এ্যাংজাইটি কমাতে হবে। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে সেই বিশেষকালীন কি দুশ্চিন্তায় লিঙ্গ উত্থান নাও হতে পারে।■আপনার রক্তে হরমোনের লেবেল বিশেষত টেস্টেস্টেরন থাইরয়েড হরমোন ইত্যাদি পরীক্ষা করে দেখা দরকার। পরীক্ষা করে যদি অস্বাভাবিক হরমোন লেবেল পরিলক্ষিত হয় তাহলে হরমোনাল■থেরাপির প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। অবশ্য হরমোনের তারতম্যজনিত কারণে লিঙ্গ উত্থানের সমস্যা খুব বেশি একটা পাওয়া যায় না।ডাক্তার আপনাকে যেসকল মেডিকেশন প্রেসক্রাইব করতে পারেন সেগুলো হলোঃ
■লিঙ্গ উত্থানে সহায়তাকরী মেডিকেশন যেমন-কেভারজ্যাক্ট, মিউস ইত্যাদি।■হরমোনাল থেরাপি বা বাইরে থেকে হরমোন দিয়ে চিকিৎসা।■ভায়াগ্রা বা সিলডেনাফিল হাইড্রোক্লোরাইড।■ইয়ামবিন দিয়ে চিকিৎসা।■অবশ্য ডাক্তার খালিকরণ ডিভাইস বা যন্ত্র এবং ইনজেকশন থেরাপি কোনটি দিয়ে চিকিৎসা চালাবেন তা তিনি নিজেই নির্ধারণ করবেন।ইরেকশনের চিকিৎসা (সার্জারি)
ইরেকশন বা লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যায় যখন মেডিকেশন বা ওষুধ সাইকোথেরাপি বা আচরণগত চিকিৎসা ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয় এবং রোগীর দৈহিক কোনো কারণ নির্ধারণ করা সম্ভবপর হয় তখন ডাক্তার আপনাকে সার্জারির পরামর্শ দিতে পারেন।এই সম্পর্কিত সার্জারি বা শল্যচিকিৎসাগুলো করে থাকেন ইউরোলজিস্টে বা মূত্র এবং জননতন্ত্র বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি পরিচালিত আমেরিকান ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে,পিনাইল ইমপ্ল্যান্টস(প্রতিস্থাপন) শতকরা ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। কতক পুরুষের ক্ষেত্রে আবার পেনিস বা লিঙ্গে রক্ত সংবহনকারী নালীতে এক ধরনের চিকিৎসা করা হয় এটিকে আমরা রিপেআর থেরাপি বলে থাকি। যদি রক্ত সংবহননালীর কোনো অসুখের জন্য এমনটি হয়ে থাকে তাহলে সেটিকে শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে সারানো যেতে পারে। অনেক যুবকদের ক্ষেত্রে দেখা যায় কোনো ধরনের ইনজুরি বা আঘাতের কারণে রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হলে যেমন-বাস বা মোটরসাইকেল এক্সিডেন্ট তখন এ ধরনের সার্জারি খুব কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এই ধরনের রিপেআর শল্য চিকিৎসা অভিজ্ঞ ইউরোলজিস্টের হাতে করানোই সমীচীন। অন্যথায় হিতে অহিত হওয়ার যথেষ্ঠ সম্ভবনা রয়েছে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে সার্জারির মাধ্যমে মূলত ইরেকশনের যে চিকিৎসা প্রয়োগ করা হয় সেগুলো হলোঃপেনাইল ইমপ্ল্যান্টস (প্রতিস্থাপন)।পুরুষাঙ্গে রক্ত সংবহন নালীতে সার্জারি (রিপেআর থেরাপি)।সবরকমের মেডিকেশন বা ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা ও সাইকোথেরাপি বা আচরণগত চিকিৎসা প্রয়োগ করার পর সার্জারির বিভিন্ন ধরনের বিপজ্জনক ঝুঁকি চিন্তা করে তবেই ডাক্তার আপনাকে শল্য চিকিৎসার পরামর্শ দেবেন। রক্ত সংবহন নালীর রিপেআর থেরাপির নামে যে সার্জারির কথা বলা হল সেগুলো কেবলমাত্র রিভাসকুলারাইজেশন স্পেশালিস্টারাই করে থাকেন।
ইরেকটাইল ডিসফাংশনের অন্যান্য চিকিৎসাঃইতিমধ্যে লিঙ্গের উত্থানজনিত সমস্যায় অনেক চিকিৎসা পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো মূলত পূর্বের চিকিৎসার পদ্ধতিগুলোরই সামান্য রূপান্তর বা মোডিফিকেশন। এগুলোর মাঝে রয়েছে বিশেষ ধরনের খালিকরণের বা ভ্যাকুয়াম ডিভাইস এবং বিশেষ সাইকোথেরাপি(সেক্স থেরাপি)।
ভ্যাকুয়াম ডিভাইস বা খালিকরন যন্ত্রের মাধ্যমে সব প্রকারের লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যার চিকিৎসা করা সম্ভব (ফিজিক্যাল বা শারীরিক, মনোগত সমস্যা এবং মিশ্র সমস্যা)।
যেসকল পুরুষের ইরেকশন বা লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যা ,মূলত মনোগত কারণে হচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে সাইকোথেরাপি বা আচরণগত চিকিৎসা অত্যন্ত কার্যকরী। এই চিকিৎসা থেরাপি অন্যান্য মেডিকেশন দিয়ে চিকিৎসা বা খালিকরণ ডিভাইসের পাশাপাশি চলতে পারে। তবে এর জন্য প্রয়োজন প্রচুর সেক্সুয়াল কাউন্সিলিং। আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত সেক্সুয়াল কাউন্সিলিংয়ের জন্য আলাদাভাবে সেক্স থেরাপিস্ট গড়ে ওঠেনি। এজন্য সেক্স সমস্যার কাউন্সিলিং এখানে করে থাকেন অভিজ্ঞ মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা।এক ধরনের শারীরিক ব্যায়াম রয়েছে যাকে বলা হয় পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ। এ সম্পর্কে আমরা নানা প্রবন্ধে আলোচনা করেছি। এটি অনেকটা কেজেল এক্সারসাইজের মত, অনেক পুরুষের লিঙ্গ উত্থানজনিত সমস্যায় এটি ভালে কাজ করে থাকে। সবচেয়ে বড় কথা হল এই ব্যায়ামগুলোর বিপজ্জনক ঝুঁকি নেই। তবে এতে কাজ না হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। তাহলে অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে মূলত যা দাঁড়ায় তা হলঃ
■ভ্যাকুয়াম ডিভাইস বা খালিকরণ যন্ত্র।■সাইকোথেরাপি বা সেক্সুয়াল কাউন্সিলিং।■সেক্স থেরাপি।■আপনার জন্য কোন চিকিৎসা পদ্ধতি কার্যকরভাবে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখবে তা আপনার ফিজিশিয়ানই নির্ধারণ করবেন।ইরেকশন বা উত্থানঘটিত সমস্যা দূরীকরণে প্রথমত যা করা দরকার তা হচ্ছে উত্থানে ব্যর্থতার সঠিক কারণ খুঁজে বের করা। একটু আগেই উল্লেখ করেছি সাইকোলজিক্যাল বা মনোগত কারণ এবং ফিজিক্যাল বা শারীরিক কারণ যে কোনোটিতেই ইরেকশন সম্পর্কী সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেহেতু মনোদৈহিক নানা কারণ এর সঙ্গে জড়িত তাই এর সঠিক রোগ নির্ণয় একটু জটিল।

*-* জ্বর হলে শরীরে লেপ-কাঁথা জড়ানো ঠিক নয়



জ্বর হলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হচ্ছে ৯৮.৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট। এই তাপমাত্রা বেড়ে গেলে আমরা তাকে জ্বর বলি। অনেকে জ্বর হলে শরীরে কাঁথা চাপিয়ে দেন। তাদের ধারণা এতে করে রোগীর ঘাম ঝরবে। জ্বর হলে ঠান্ডা হাওয়া আসার ভয়ে অনেকে ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে রাখেন। প্রকৃতপক্ষে এগুলোর কোনটাই জ্বর কমানোর পদ্ধতি নয় বা জ্বর কমাতে সাহায্য করে না। জ্বর হলে এমনিতেই শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তখন যদি শরীরে মোটা কাপড়, কম্বল জড়ানো হয় তবে শরীরের তাপমাত্রা আরো বেড়ে যায়। ঠিক তেমনি গায়ে তেল মালিশ করা ঠিক নয়। এতে শরীরের লোমকুপ বন্ধ হয়ে যায় এবং শরীরের বাড়তি তাপ বের হতে দেয় না। জ্বর হলে শরীরের কাপড় চোপড় যতটুকু সম্ভব খুলে দিতে হবে। মোট কথা উন্মুক্ত আলো-বাতাসের আয়োজন করতে হবে। সেই সাথে ফ্যান থাকলে সেটিও মধ্যগতিতে চালিয়ে দিতে হবে।

*-* Epilepsy বা মৃগী রোগ কি? আসুন এ ব্যাপারে একটু জানি।



Epilepsy (মৃগী রোগ)
মৃগী রোগের ফিট আমরা অনেকেই দেখেছি বাড়ীতে, পথেঘাটে বা কাজের জায়গায়। এই মৃগী রোগই হল একটা স্নায়ুর রোগ যেটা সর্ব সাধারনের মধ্যে সবচেয়ে বেশী লক্ষ্য করা যায়।মৃগী রোগের চিকিৎসা সাধারনতঃ স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরাই করে থাকেন।এদের আবার নানা মানসিক সমস্যাও হয়, সেজন্য তাদের কখনও কখনও মানসিক ডাক্তারের কাছেও পাঠানো হয়।এছাড়াও অনেক মানসিক রোগীর পরে মৃগী রোগও হতে পারে।
হিস্টিরিয়া (Hysteria) কি মৃগী রোগ?
আরেক রকমের ফিটের রোগ (কেউ কেউ তাকে মৃগী রোগ বলে থাকেন) আমরা প্রায়শঃই দেখে থাকি।সেটা সাধারনতঃ মেয়েদের মধ্যেই বেশী হয়, এবং মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে হয়। তাকে বলা হয় হিস্টেরিয়া।এই ধরনের ফিটে শুরু হয় সাধারনতঃ ধীরে ধীরে, অবশ্য তাড়াতাড়িও হতে পারে।রোগী প্রথমে অজ্ঞানের মত হয়ে যায়, হাত পা ছুড়তে থাকে বা শক্ত হয়ে যায়।যদি ধরে রাখার চেস্টা করা হয় তবে বেশী করে হয়।কারো কারো এমনিই অজ্ঞানের মতো অবস্থা হয়।অজ্ঞানের মত অবস্থায় নানা আওয়াজ করতে থাকে, বা নানা কথা বলতে থাকে।যে কথাগুলো বলে সেটাতে সাধারনতঃ মনের নানা দন্দ বা চাপের প্রকাশ পায়।কারো কারো ভর হয়েছে বলা হয়।সে সময় তাদের কথার মধ্যে দিয়ে তারা কোন বিশেষ ব্যক্তির বা নিজের মনের ভাব প্রকাশ করে থাকে। কেউ কেউ মনে করে রোগীর মধ্যে কোনো মৃত আত্মা বা অশরীরি আত্মা বা দেব দেবীও ভর হয়েছে।
এই অবস্থা সাধারনতঃ বেশ কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা পর্য্যন্ত হয়, আবার দিনের কোনো বিশেষ সময় হয়। জ্ঞান ফিরে আসার পর, রোগী কিছুই মনে করতে পারে না। তাদের ভাবসাব প্রায় স্বাভাবিক হয়ে যায়। কারো কারো টেনশন, বা উদ্দিগ্ন ভাব বা বিষন্নতা ভাব থাকতে পারে।উপরে যে ফিটের বর্ননা করা হল সেই হিস্ট্রিরিয়াকে আমরা অনেকেই মৃগী রোগ বলে ভুল করে থাকি। এবং এই দুটোর মধ্যে পার্থক্য করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।
হিস্টিরিয়া ও মৃগী রোগের কি করে তফাৎ করা যায়?
নীচের উপসর্গ গুলো থেকে এই দুই রোগকে তফাৎ করা যেতে পারে।
১) হিস্টিরিয়াতে সব সময়ই একটা মানসিক চাপ থাকে, মৃগী রোগে সেটা প্রায় থাকে না।
২) হিস্টিরিয়া মেয়েদেরই বেশী হয়। মৃগী রোগ মেয়ে ও ছেলে দের মধ্যে সমান সংখ্যায় হয়।
৩)হিস্টিরিয়াতে রোগী একেবারে অজ্ঞান নাও হতে পারে।রোগী অনেক সময় কথার উত্তর দেয়,চোখ পিট পিট করে।জ্ঞান ফেরার পর তারা মনে করতে পারে কি হয়ে ছিল।যদিও কেঊ কেউ মনে করতে পারে না ফিটের সময় কি কি কথা তারা বলেছিল। আর মৃগী রোগের ফিটের সময় রোগি কোনো কথার উত্তর দেয় না, জ্ঞান ফেরার পর কিছুই মনে করতে পারে না।
৪)হিস্টিরিয়ার ফিটে রোগির গায়ে কোনো আঘাত বা চোট লাগে না। মৃগী রোগি হঠাৎ অজ্ঞান হ্য়ে পড়ে গিয়ে শরীরে বা মাথায় আঘাত লাগতে পারে।ফিটের সময় নিজের দাঁতের কামড়ে জিব কেটে যেতে পারে।শ্বাস নালিতে খাবার ঢুকে শ্বাসরোধ হতে পারে। এগুলোর কোনোটাই হিস্টিরিয়াতে হয় না।
৫) হিস্টিরিয়াতে জ্ঞান ফেরার পর রোগী তাড়াতাড়ি সজাগ হয়ে যায়।তারপর দুর্বল বোধ করে।কিন্তু ঘুমিয়ে পড়ে না। আর মৃগী রোগির ফিট হয়ে যাওয়ার পর অনেকেই ঘুমিয়ে পড়ে কিছুক্ষনের জন্য।যদি জাগানোর চেস্টা করা হয় তবে তারা সজাগ থাকে না।আশে পাশে কি হচ্ছে বুঝতে পারে না, লোকজনকে চিনতে পারে না, এবং অসংলগ্ন ব্যবহার করে।
৬)হিস্টিরিয়ার ফিটে সাধারনতঃ রোগি কাপড়ে মল,মূত্র ত্যাগ হয়ে যায় না।কিন্তু মৃগী রোগের ফিটে তা হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশী।
৭)হিস্টিরিয়া ফিটের সময় বা পরে পরিক্ষা করে নার্ভের অস্বাভাবিক কোনো সাইন পাওয়া যায় না। মৃগী রোগির স্নায়ুর পরিক্ষায় বিশেষ কিছু সাইন পাওয়া যায়, তার থেকে বোঝা যায় যে এটা একটা স্নায়ুর রোগ।
৮) এছাড়া ইইজি (EEG, Electroencephalography) করলে মৃগী রোগির নানা অস্বাভাবিক রেজাল্ট পাওয়া যায়। কিন্তু হিস্টিরিয়াতে তা পাওয়া যায় না।
এই দুই রোগের আলাদা করা বিশেষ দরকার কারন চিকিৎসাও একদম বিভিন্ন। হিস্টিরিয়ার জন্য মানসিক ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, আর মৃগী রোগের জন্য নিউরোলজিস্ট বা স্নায়ু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।
কত রকমের মৃগী রোগ আছে?
মৃগীরোগটাকে স্নায়ু বিশেষজ্ঞরা তিন ভাগে করছেন—
১) আংশিক মৃগীরোগ(Partial epilepsy); এই ধরনের ফিটে দেহের কোন বিশেষ অঙ্গের কাজ ব্যহত হয়।যেমন—
(ক) ফিটের সময় রোগির হাত ,পা, বা দেহের কোনো অংশ অস্বাভাবিক ভাবে নড়তে পারে।যেমন হঠাৎ এটা শুরু হয় তেমনই হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় বা ঠিক হয়ে যায়। এতে রোগির জ্ঞান থাকে।
(খ) এই ধরনের ফিটে দেহের কোন অংশের সাড় বা অনুভূতির পরিবর্তন হয়। যেমন দেহের কোনো অংশে সাড় থাকে না, বা ঝিন ঝিন, না জ্বালা করে ইত্যাদি।
(গ) এতে হঠাৎ হার্টের ধড়ফড় করা বা রক্তচাপ হঠাৎ বৃদ্ধি হওয়া, মনের মধ্যে হঠাৎ টেনশন আসা কোন কারন ছাড়াই ইত্যাদি।উপরের ফিটগুলোতে রোগি জ্ঞান হারায় না, আর রোগি সব বুঝতে পারে কিছু একটা অস্বাভাবিক অবস্থা হচ্ছে।
২) এই আংশিক মৃগীরোগে পুরো জ্ঞান থাকে না,তারজন্য বুঝতে পারে কি হচ্ছে তাদের মধ্যে। ফিটের সময় সাময়িক ভাবে স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পারে, কারো কারো ডিপ্রেসন বা বিষন্নতা ভাব হয়,কারো কারো প্যানিক অ্যাটাক হয়, কারো কারো জটিল মানসিক ভাবের পরিবর্তন হয়। সাইকোসিসের নানা উপসর্গও থাকতে পারে।কেউ কেউ হঠাৎ অটোম্যাটিক ভাবে কিছু করে ফেলতে পারে। যেমন কাউকে আঘাত করতে পারে ইত্যাদি। জ্ঞান যখন ফেরে তখন তারা কিছু মনে করতে পারে না। আবার এটাও হয় যে কোন ফিট আংশিক ভাবে শুরু হয়ে তারপর সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। তখন অজ্ঞান হারিয়ে হাত পা, দেহের খিঁচুনি হয়।
৩) এই ধরনের মৃগীরোগে সারা শরীরে হয়, রোগীর জ্ঞান থাকে না।বিভিন্ন রকমের ফিট হতে পারে,যেমন—
(ক) পেতি মাল( Petit mal);
ফরাসি ভাষায় পেতি মাল’এর মানে হ’ল “কম বা ছোট অস্বাভাবিকতা”।এই রোগটা সাধারনতঃ ছোট বয়সে (৫,৬ বছর বয়সে) হয়। এটা হলে শিশুরা হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।যা কিছু করছিল তা বন্ধ করে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে,চোখ পিট পিট করে,কথা বন্ধ করে দেয়,ঠোট নড়তে থাকে। এটা কয়েক সেকেন্ডের জন্য হয়। ফিটের সময় ডাকলে সাড়া দেয় না।তারপরে ঠিক হয়ে গেলে আবার খেলতে থাকে। রোগী বলতেও পারে না কি হয়েছে। এই অবস্থা বড় হলে অনেক সময় ঠিক হয়ে যায়। কারো কারো এটা আরো বাড়াবাড়ি হয়ে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
(খ) আর এক ধরনের ফিটের রোগ,সেটাও বাচ্চা বয়সে শুরু হয়।এটা হয় যেসব বাচ্চার জন্মের সময় ব্রেনে আঘাত লেগেছে বা ব্রেনে কোনো সংক্রামন হয়েছে তাদের মধ্যে।কারো কারো কোনো কারন ছাড়াও হতে পারে। ফিটের সময় বাচ্চার হাত পা হঠাৎ নড়ে ওঠে,বা শক্ত টানটান হয়ে যায়,শরীর বেঁকে যায়,আর বাচ্চাটা এতে কেঁদে ওঠে। এই ধরনের ফিট জেগে বা ঘুমের সময় হতে পারে। এই ধরনের ফিট বেশি হতে থাকলে ব্রেনের ক্ষতি হয়।
(গ) গ্রান্ড মল এপিলেপ্সি(Grand Mal epilepsy)
এই ধরনের মৃগীরোগ প্রায়ঃশই দেখে থাকি। ফিটের সময় রোগী হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে পড়ে যেতে পারে।তাতে শরীরে, মাথায় আঘাত লাগতে পারে। অজ্ঞান হওয়ার আগে অনেক রোগী বেশ বুঝতে পারে যে ফিট হবে।কেউ কেউ অজ্ঞানের সময় মুখের থেকে জোরে আওয়াজ করতে পারে।এটা হয় বুকের শ্বাসপ্রশ্বাসের পেশীগুলো হঠাৎ সংকোচনের জন্য,সেই সময় সারা হাত পা ইত্যাদির পেশীরও সংকোচন হয়। তাতে সারা দেহ ধনুকের মত বেঁকে যায়। এই অবস্থাটা মিনিট খানেক থাকার পর, রোগী দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেয় আর হাত পা, সারা দেহ ঝাকানির মত হতে থাকে।এই অবস্থা হয় কয়েক মিনিট ধরে।
ফিটের সময় রোগীর জিব কেটে যেতে পারে, কাপড়ে মল মূত্র ত্যাগ করতে পারে,মুখের কোনা দিয়ে ফেনা, যেটা রক্তের সঙ্গে মিশে লাল হয়ে যেতে পারে।কেউ কেউ ফিটের সময় বমি করে দেবার জন্য শ্বাস নালিতে খাবার ঢুকে শ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়ে মারা যেতে পারে।
ফিট বন্ধ হবার পর রোগী বেশ কিছুক্ষনের জন্য ঘুমিয়ে পড়ে। কারো কারো জ্ঞান আসার পরেও আশেপাশের কিছু চিনতে পারে না, যেন স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলে,আবার ভীষন ছটফটে বা আক্রমনাত্মক হয়ে যেতে পারে।এমনও হয়েছে যে ফিটের থেকে জ্ঞান ফেরার পর রোগী বাইরে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ছোটাছুটি করছে, তাকে সামলান তখন বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।
(ঘ) আরেক ধরনের ফিট আছে যাতে রোগী হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়। হাত পা, বা দেহ শক্ত হয় না বা কোনো কাঁপা ঝাকুনি হয় না। আবার কারো কারো জ্ঞান হারিয়ে যাওয়ার পর শুধু সারা শরীর শক্ত হয়ে যায়।
(ঙ) কোনো কোনো মৃগীরোগের ফিট দেহের এক দিকে হতে পারে, আন্যদিকে ঠিক থাকে। জ্ঞান থাকে না ফিটের সময়।
উপরের মৃগীরোগের সব বর্ননাগুলো দেওয়া হল, কিন্তু সব নাম দেওয়া হল না, কারন সেগুলোর বাংলায় তর্জমা করা গেল না বলে।
মৃগীরোগের হওয়ার কারন কি?
সব মৃগীরোগের কারন জানা যায় নি, তবে দেখাগেছে যে—
১) জ্বর একটা কারন, এটা হয় সাধারনতঃ বাচ্চা বয়সে। বেশী জ্বর হলেই ফিট হবে, এই ফিটটা অনেকটা গ্র্যান্ড মল এপিলেপ্সির মত। বড় হলে এটা ঠিক হয়ে যায়।
২) মাথায় আঘাত লাগার পর ব্রেনে কোনো ক্ষতি হলে সেই ধরনের মৃগীরোগের চিকিৎসা করা বেশ কঠিন।
৩) ব্রেনে টিউমার হলে, বা ব্রেনে কোনো ধরনের ব্যাক্টিরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রামন হলে ফিট হতে পারে।
৪) এটা মনে রাখা দরকার যে বেশীর ভাগ মৃগীরোগের কারন জানা যায় নি।
বয়স অনুসারে মৃগীরোগের কারন কি কি?
বিভিন্ন বয়সে মৃগীরোগের বিভিন্ন কারন হয়ে থাকে।
১) নবজাত ও শিশুবয়সে ফিটের কারনঃ এই বয়সে ফিটের কারন গুলি হল যেমন, ব্রেনে অক্সিজেন কম হওয়া,জন্মাবার সময় মাথায় আঘাত লাগা,ব্রেনে কোনো সংক্রমন জীবানুর আক্রমন,বা জন্মগত ব্রেনের কোনো অস্বাভাবিক অবস্থা,বা কোনো Metabolic disorder যেমন রক্তে সুগার বা চিনির মাত্রা কম হওয়া ইত্যাদি। মায়েদের যদি কোনো নেশার দ্রব্য যেমন অ্যালকোহল, হেরোইন ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে তাহলে নবজাত শিশুর জন্মাবার পরে ফিট হয়। এছাড়া কারও কারও বংশগত কারনে এই ধরনের ফিট হতে পারে।
শিশু বয়সে ( তিন মাস থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্য্যন্ত) জ্বরের জন্য ফিট এটাই সবচেয়ে বেশী দেখা যায়। এতে শিশুদের ব্রেনে জীবানুর সংক্রানের জন্য হয় না। সাধারনতঃ ১৮ থেকে ২৪ মাসের বাচ্চাদের হয়, তাদের কানে ব্যথা বা বুকে কোনো ইনফেক্সন হয় বা পেট খারাপ হয়। জ্বরের মধ্যে শিশুর ফিট হয়, প্রথমে গা শক্ত হয়, তার পরে সারা দেহ ঝাঁকিয়ে খিঁচুনি হয়। এটা সাধারনতঃ এক বার হয়। এদের বড় হয়ে ফিট হবার সম্ভাবনা থাকে না।কারো কারো কয়েকবার হতে পারে,তাদের ফিটটা বেশী সময় (মিনিট ১৫ কম) ধরে হয়,আর ফিটের সময় সারাদেহে না হয়ে, আংশিক ভাবে হয়। এই ধরনের ফিটের যাদের হয় তাদের বড় হয়ে ফিটের সম্ভাবনা বেশী।
শিশু বয়সেই বেশীর ভাগ মৃগীরোগের আরম্ভ হয়। কিছু বাচ্চা যারা শারীরিক ভাবে সুস্থ তাদের এই গ্রান্ডমল এপিলেপ্সি অর্থাৎ মৃগী রোগ শুরু হয়, তারপর সেই মৃগীরোগের উপসর্গগুলোর পরিবর্তন হতে পারে। এই বয়সেই পেটি মল ফিট,ও অন্যান্য আংশিক মৃগীরোগও শিশু বয়সে শুরু হয়।
২) বয়ঃসন্ধিক্ষনে বা যুবক বয়সে সাধারনতঃ যে সব মৃগীরোগ হয় তাদের কোনো কারন পাওয়া যায় না। এদের বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের কারো মৃগী রোগ থাকতে পারে। এদের মধ্যে যাদের পেটিমল ফিট হত তাদের ফিট হওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা এটার পরিবর্তন হয়ে গ্রান্ডমল ফিট হতে পারে।
এছাড়া এই বয়সে যদি ব্রেনে কোনো রোগের সংক্রমন হয়, বা মাথায় বেশ আঘাত লাগে, তাহলেও ফিট হতে পারে।মাথায় আঘাত লেগে যদি ব্রেনে রক্তক্ষরন হয়, বা আঘাত লাগার পরে যদি অনেকক্ষন ধরে অজ্ঞান অবস্থায় থাকে, বা মাথায় আঘাত লেগে মাথার খুলি ভেঙ্গে গিয়ে ব্রেনে ক্ষতি করে তবে তাদের পরে ফিট হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী হয়। এমনও দেখা গেছে যে মাথায় কম অঘাত লাগার পর কয়েক ঘন্টার বা কয়েকদিনের মধ্যে যাদের আংশিক ফিট হয়েছে তাদের পরে ফিট হওয়ার সম্ভাবনা বেশী
৩) প্রাপ্ত বয়স্ক বা তার পরে ফিট হওয়ার কারন প্রধান কারন, মাথার রক্ত ক্ষরন(সেরিব্রাল অ্যাটাক), ব্রেনে টিউমার, নানারকম ব্রেনের শুকিয়ে যাওয়া(Degenerative diseases) জন্য। সেরিব্রাল স্ট্রোকের পর ফিটটা কয়েক মাস থেকে বছরের পর শুরু হয়।
৪) এছাড়াও আরো অনেক এন্ডক্রিনের রোগ আছে যাতে ফিট হতে পারে।যেমন রক্তে গ্লুকোজ বা চিনি কম হলে, কিডনির রোগে, লিভার কাজ না করলে, রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কম হলে, ইত্যাদি।বেশ কিছু ঔষধ আছে যেগুলো ফিট করতে পারে। ড্রাগ যেমন, কোকেন,অ্যাম্ফিটামিন, মিথাইলফেনিডেট ইত্যাদি, যারা অনেকদিন ধরে ঘুমের ঔষধ খেয়ে নেশা করে বা অ্যালকোহল এর নেশা আছে,যদি হঠাৎ বন্ধ করে,তাদের ফিট হতে পারে।

মৃগী রোগ কি
মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে বৈদ্যুতিক তৈরী হওয়ার কারণে মৃগীরোগ হয়ে থাকে। এর ফলে বার বার খিঁচুনী হয়। খিঁচুনীর সময় কিছু কিছু মৃগীরোগী ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে থাকে (Stare blankly), আবার কারো ক্ষেত্রে পুরো শরীরে মাংসপেশীর কম্পন (Convulsions) ঘটে।

লক্ষণ ও উপসর্গ
মৃগীরোগের কারণে খিঁচুনীর ফলে সাধারণত: নিচের উপসর্গগুলো দেখা দেয় :
• বিভ্রান্ত বোধ করা
• হাত পায়ে চরমভাবে ঝাঁকুনি/কম্পন হওয়া
• সম্পূর্ণভাবে জ্ঞান হারানো
ছবি: মৃগীর প্রভাব একেবারে শেষ না হওয়া পর্যন্ত রোগীর সাথে থাকতে হবে
তথ্য সূত্র: দুর্যোগে প্রাথমিক চিকিৎসা, পৃষ্ঠা:৬০, বাংলাদেশ ডিজাষ্টার প্রিপেয়ার্ডনেস সেন্টার (বি,ডি,পি,সি), ঢাকা, অক্টোবর ১৯৯৫।
মৃগী রোগী জ্ঞান হারালে করণীয়
• অসুস্থ্য ব্যক্তিকে ব্যস্ত রাস্তা বা লোকজনের ভীড় থেকে আগলে রাখতে হবে
• অজ্ঞান অবস্থায় যাতে কোন আঘাত না লাগে তার ব্যবস্থা করতে হবে। অসুস্থ্য ব্যক্তি যদি পড়ে যেতে থাকে তবে তাকে ধরাধরি করে নিরাপদ জায়গায় হাল্কাভাবে শুইয়ে দিতে হবে
• সম্ভব হলে তার কাপড় ঢিলা করে দিয়ে মাথার নীচে নরম কিছু দিতে হবে
• খিঁচুনী বন্ধ হলে,অসু্স্থ্য ব্যক্তিকে তার শ্বাস নিতে সাহায্য করতে হবে
• মৃগীর প্রভাব একেবারে শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার সাথে থাকতে হবে
• একবারের আক্রমণ তাড়াতাড়ি সম্পূর্ণভাবে সেরে গেলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
ছবি: মৃগী রোগী অজ্ঞান হয়ে গেলে তার মাথার নিচে নরম কিছু দিতে হবে
তথ্য সূত্র: দুর্যোগে প্রাথমিক চিকিৎসা, পৃষ্ঠা:৬০, বাংলাদেশ ডিজাষ্টার প্রিপেয়ার্ডনেস সেন্টার (বি,ডি,পি,সি), ঢাকা, অক্টোবর ১৯৯৫।

কি করা যাবে না
• বিপদের সম্ভাবনা না থাকলে অসুস্থ্য ব্যক্তিকে নাড়াচড়া করা বা ওঠানো যাবে না
• তাকে জোর করে ঠেসে ধরে রাখা যাবে না
• তার মুখে কিছু ঢুকিয়ে দিয়ে মুখ খুলতে চেষ্টা করা যাবে না
• অসুস্থ্য ব্যক্তিকে জাগানোর চেষ্টা করা যাবে না
• অসু্স্থ্য ব্যক্তি পুরোপুরি সজাগ হয়েছে কি না তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাকে কিছু পান করতে দেয়া যাবে না
• অসুস্থ্য ব্যক্তি কয়েকবার জ্ঞান হারানোর ইতিহাস না থাকলে, জ্ঞান হারানো অবস্থায় কোন রকম জখম না হলে,অথবা জ্ঞান ফিরে আসতে ১৫ মিনিটের চেয়ে বেশী সময় না লাগলে চিকিৎসা সাহায্য বা এম্বুলেন্স চেয়ে পাঠানোর প্রয়োজন নেই।

কখন ডাক্তার দেখাবেন
• ৫ মিনিটের অধিক সময়ব্যাপী খিঁচুনী স্থায়ী হলে
• খিঁচুনী বন্ধ হবার পরও জ্ঞান ফিরে না আসলে
• খুব শীঘ্রই দ্বিতীয়বার খিঁচুনী হলে
• রুগী গর্ভবতী হলে
• রুগীর বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস রোগ থাকলে
• খিঁচুনীর সময় আঘাত প্রাপ্ত হলে

কোথায় চিকিৎসা করাবেন
• উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
• জেলা সদর হাসপাতাল
• মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
• বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
• বেসরকারী হাসপাতাল

কি ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে
মৃগীরোগ শনাক্তকরণের জন্য নিচের পরীক্ষাগুলো করাতে হবে :
• স্নায়ু এবং আচরণগত পরীক্ষা (Neurological and behavioral exam)
• রক্তের পরীক্ষা

মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক পরীক্ষার জন্য নিচের পরীক্ষাগুলো করাতে হবে :
• স্নায়ু-মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা (Neuro-psychological test)
• ইসিজি (ECG)
• কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফী (Computerized tomography)
• ম্যাগনেটিক রিজোন্যান্স ইমেজিং (Magnetic Resonance imaging )
• সিঙ্গেল-ফোটন ইমিশন টমোগ্রাফী Single-Photon emission Computerized tomography)


কি ধরণের চিকিৎসা আছে
রোগের লক্ষণ, মাত্রা এবং রূগীর বয়স অনুযায়ী ডাক্তারের পরামর্শ ও নির্দেশানুযায়ী সকল বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।
চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে-
• মৃগীরোগ প্রতিরোধক ঔষধ (Anti epileptic) সেবন
• শল্য এবং অন্যান্য চিকিৎসা

জীবন-যাপন পদ্ধতি
• ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ সেবন করা যাবে না
• গর্ভধারণ করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে
• পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে
• ‘রুগীর মৃগী আছে’ এইরুপ লেখা কোন কাগজ/কার্ড রুগীর সাথে রাখতে হবে
• চাপ কমাতে হবে
• ধূমপান বর্জন করতে হবে
• মদ/নেশা জাতীয় পানীয় পান থেকে বিরত থাকতে হবে

সচরাচর জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন. ১ . মৃগীরোগ হওয়ার কারণগুলো কি কি ?
উত্তর . যেসব কারণে মৃগীরোগ হতে পারে:
• বংশগত কারণে
• সড়ক দূর্ঘটনা অথবা অন্য কোন কারণে মস্তিষ্ক আঘাতপ্রাপ্ত হলে
• স্ট্রোক অথবা হার্ট অ্যাটাকের ফলে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্থ হলে
• বয়স্কদের ক্ষেত্রে মানসিক শক্তির দূর্বলতা (Dementia)
• মেনিনজাইটিস, এইডস এবং ভাইরাল ইনসেফালিটিস (Viral encephalitis) এর মত অসুখ হলে
• সংক্রমণ, অপুষ্টি এবং অক্সিজেনের অভাবের কারণে মায়ের গর্ভের শিশুর মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এর ফলে শিশুর মস্তিস্ক সংক্রান্ত পক্ষাঘাতগ্রস্থতা দেখা দিতে পারে
• অটিসম এবং জন্মগত ভাবে ত্রুটি যেমন : ডাউনস সিনড্রোম (Down syndrome)হলে

প্রশ্ন .২ . কাদের মৃগীরোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে?
উত্তর . যাদের মৃগীরোগ হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি তারা হলেন :
• শিশু বয়সে এবং ৬৫ বছরের পর। তবে এটা যে কোন বয়সেই হতে পারে
• মহিলাদের তুলনায় পুরুষরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন
• এই রোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে
• যারা কোন কারণে মস্তিষ্কে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন
• যাদের স্ট্রোক ও সংবহন নালিকার সমস্যা আছে
• মেনিনজাইটিসের সংক্রমণের কারণে মস্তিষ্কে ও মেরুদন্ডে প্রদাহ হলে
• শিশু বয়সে যদি খুব উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর হয় এবং এর সাথে খিঁচুনীর ইতিহাস থাকে তাহলে পরবর্তী সময়ে মৃগীরোগ দেখা দিতে পারে

প্রশ্ন .৪ .মৃগীরোগের ফলে কি কি জটিলতা দেখা দিতে পারে ?
উত্তর : মৃগীরোগের ফলে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন :
• পড়ে গেলে মাথায় আঘাত পেতে পারে অথবা হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে
• মৃগীরোগ থাকলে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫ গুণ সম্ভাবনা বেশি যে রুগী সাঁতার কাটার সময় ডুবে যেতে পারে
• খিঁচুনীর ফলে বা অজ্ঞান হয়ে গেলে, সেই সময় রুগীর গাড়ী চালনা করলে দূর্ঘটনার সম্ভাবনা বেশি থাকে
• গর্ভাবস্থায় খিঁচুনী হলে মা ও বাচ্চার অনেক বিপদ হতে পারে। কিছু কিছু মৃগীরোগ প্রতিরোধক ঔষধ খেলে বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি দেখা যায়।

আরও কিছু জটিলতা আছে যেগুলো সচরাচর না ঘটলেও দেখা যায়। যেমন :
• দীর্ঘস্থায়ী খিঁচুনীতে মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ রূপে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে
• হঠাৎ মৃত্যু হতে পারে

প্রশ্ন.৫. মৃগীরোগ প্রতিরোধক ঔষধ সেবনের ফলে কি ধরণের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে?
উত্তর.সকল মৃগীরোগ প্রতিরোধক ঔষধের কিছু কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে, যেমন-
• অবসাদ
• মাথা ঘোরা/ঝিমঝিম করা
• ওজন বাড়া
• হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস
• চামড়ায় লালচে দানা
• শারীরিক ক্রিয়াকর্মে সমন্বয়ের অভাব
• কথা বলায় সমস্যা

প্রশ্ন.৬. কিভাবে সুস্থ থাকা যাবে?
উত্তর.
• ডাক্তারের পারমর্শ নিয়মিত ভাবে মেনে চলতে হবে
• নিয়ম অনুযায়ী ঔষধ খেতে হবে
• ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ শুরু করা, বদলানো, মাত্রা বাড়ানো বা বন্ধ করা যাবে না
• কোন ঔষধে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে সাথে সাথে ডাক্তারকে জানাতে হবে
• আচরণগত পরিবর্তন যেমন: অতিরিক্ত বিষাদ দেখা দিলে ডাক্তারকে জানাতে হবে
• পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে

*-* স্ট্রোকের আদ্যোপান্ত



পৃথিবীতে প্রতি ছয় সেকেন্ডে একজন স্ট্রোকে মারা যাচ্ছেন। এসব আক্রান্ত ব্যক্তি কেউ হতে পারেন আপনার মা-বাবা, ভাইবোন, নিকটাত্মীয়—যে কেউ; এমনকি আপনি নিজেও। স্ট্রোক যেমন ব্যক্তিগত, সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যা, একই সঙ্গে অনেক মানুষ হারাচ্ছে তাদের কর্মক্ষমতা, হচ্ছে প্রচুর অর্থ ব্যয়। সুতরাং স্ট্রোক এক জাতীয় ও বিশ্বজনীন সমস্যা।
আসুন, স্ট্রোক সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক। স্ট্রোককে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় সেরিব্রভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট বলা হয়। সেরিব্রাল অর্থাৎ মস্তিষ্ক ভাসকুলার অর্থ রক্তনালি। মস্তিষ্কের রক্তবাহী নালির দুর্ঘটনাকেই স্ট্রোক বলা যায়। এ দুর্ঘটনায় রক্তনালি বন্ধও হতে পারে, আবার ফেটেও যেতে পারে। আমাদের দেশে প্রচলিত একটি ধারণা আছে, স্ট্রোক একটি হূৎপিণ্ডের রোগ। বাস্তবে এটি মোটেই সত্য নয়। স্ট্রোক সম্পূর্ণই মস্তিষ্কের রক্তনালির জটিলতাজনিত রোগ।
৬০ বছরের বেশি বয়স্ক ব্যক্তিদের ভেতর স্ট্রোক মৃত্যুর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ। সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে স্ট্রোকের হার বেড়ে যায়। তরুণেরাও কখনো এর শিকার হয়। অনিয়মিতভাবে উচ্চরক্তচাপের ওষুধ সেবন স্ট্রোকের সবচেয়ে বড় কারণ। এ ছাড়া ধূমপান, অতিরিক্ত টেনশন, হূদেরাগ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোকের পারিবারিক ইতিহাস, রক্তে বেশি মাত্রায় চর্বি, অতিরিক্ত মাত্রায় কোমল পানীয় গ্রহণ এর আশঙ্কা বাড়ায়। কেউ কেউ জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়িকেও এর কারণ হিসেবে অভিহিত করেন।
স্ট্রোকের এক-তৃতীয়াংশ অত্যন্ত বিপজ্জনক। এর মধ্যে রোগীর বয়স, স্ট্রোকের আকৃতি, আক্রমণের জায়গা, অন্যান্য রোগের উপস্থিতি, কী ধরনের স্ট্রোক হয়েছে এর ওপর ফলাফল অনেকটা নির্ভর করে। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে মৃত্যুহার ৫০ শতাংশ। মস্তিষ্কের অনেকখানি জায়গাজুড়ে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে রোগী শুরুতেই মারা যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি ফলাফলের জন্য বলা যায় যে স্ট্রোকের পাশাপাশি হূৎপিণ্ড বা ঘাড়ের রক্তনালি বন্ধ থাকলে পরবর্তী এক বছরের ভেতর ৫-১৫ শতাংশ রোগীর আবার স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

প্রয়োজনীয় পরীক্ষা
সব রোগীর জন্য অবশ্যই সিটি স্ক্যান পরীক্ষা করতে হবে। রক্তক্ষরণ আছে কি না, স্ক্যান থেকে এটি জানা যায়। রক্তক্ষরণ হলে সিটি স্ক্যানে সাদা দেখায়, আর রক্ত সরবরাহ কমে গেলে সিটি স্ক্যানে সেই জায়গা কালো দেখা যায়। রক্তক্ষরণের জায়গার চারপাশে পানি জমা হলে একে ইডিমা বলা হয়। এই ইডিমা চারপাশের মস্তিষ্কের ওপর আরও বেশি চাপ দেয়। সিটি স্ক্যানে এই ইডিমাকে কালো দেখায়। রক্তক্ষরণ হয়ে রক্ত ব্রেনের পানি বা সিএসএফের সঙ্গে মিশে যেতে পারে, ব্রেনের কেন্দ্রে ভেন্ট্রিকলে ঢুকে যেতে পারে। এর ফলে ব্রেনের ভেতর পানির চলাচল বন্ধ হয়ে, পানি জমে জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়ে থাকে। এরপর ঘাড়ের রক্তনালির ডপলার পরীক্ষা করা উচিত। পাশাপাশি রুটিন পরীক্ষাগুলোও করা উচিত। রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা পরীক্ষা করে নিতে হবে।

ব্রেনের কোন অংশে স্ট্রোক বেশি হয়
সাধারণত ব্রেনের নিচের দিকে ব্যাজাল গ্যাংলিয়া নামক জায়গায় সবচেয়ে বেশি রক্তপাত দেখা যায়। মস্তিষ্কের বাকি অংশের বিভিন্ন জায়গায় এ রক্তপাত হতে পারে। এ ছাড়া কখনো ব্রেনের নিচের দিকে ব্রেনস্টেমে রক্তপাত ঘটে থাকে, এটি সবচেয়ে খারাপ অবস্থা। এই রক্ত ব্রেনের পানির সঙ্গে মিশে ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা অত্যন্ত খারাপ ফল বহন করে। জমাটবাঁধা রক্ত পার্শ্ববর্তী ব্রেনে চাপ প্রয়োগ করে থাকে। প্রথম ৪৮ ঘণ্টা ধরে ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে। পরে বন্ধ হয়ে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব রক্ত এক ও দুই মাসের ভেতর কমে যায়।
রক্তপাত বা রক্ত সরবরাহ কম—যেটাই ঘটুক না কেন, এর ফলে রোগীর কিছু কিছু দৈনন্দিন কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। মস্তিষ্কের বিভিন্ন জায়গা বিভিন্ন কাজের জন্য নির্দিষ্ট করা থাকে।

ভালো থাকার জন্য
স্ট্রোক থেকে ভালো থাকার জন্য কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রথমেই দেখতে হবে রক্তনালি কেন সরু ও শক্ত হয়ে যায়? রক্তে অতিমাত্রায় চর্বি জমাই এর কারণ। সুতরাং স্ট্রোক থেকে ভালো থাকতে গেলে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে (কমপক্ষে ৪৫ মিনিট হাঁটবেন), ব্যায়াম করে কয়েক কেজি বাড়তি ওজন ঝেড়ে ফেলা যায়।
ধূমপানকে ‘না’ বলুন। যেকোনো পরিবেশে হাসিখুশি থাকুন। আসুন, স্ট্রোককে দূরে সরিয়ে রাখি। চর্বি ও শর্করাযুক্ত খাবার অপছন্দ করুন।
ফাস্টফুড, বাদাম, সন্দেশ, রসগোল্লা, দুধ-ঘি-পোলাও-বিরিয়ানি, পাঙাশ, চিংড়ি, কাঁকড়া, গরু বা খাসির মাংস, নারকেল বা নারকেলযুক্ত খাবার, ডিমের কুসুম প্রভৃতি রসনাযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়। অনেকেই বলে থাকেন, তাহলে খাব কী? ইচ্ছামতো শাকসবজি, অল্প ভাত, পাঙাশ, চিংড়ি ও কাঁকড়া বাদে যেকোনো মাছ, বাচ্চা মুরগি, ডিমের সাদা অংশও খেতে পারেন।

স্ট্রোক হলে কী করতে হবে
সাধারণত লোকের তো আর বোঝা সম্ভব নয় কোনটা স্ট্রোক, কোনটা হার্টের সমস্যা। সুতরাং প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক, স্ট্রোক কী কী লক্ষণ নিয়ে প্রকাশ পায়।
অনেক রোগী শুরুতেই অজ্ঞান হয়ে যান, আবার (রোগীর আত্মীয়ের ভাষায়) শাশুড়ি বিকেলে ঘুম থেকে উঠে পান মুখে দিয়েছেন। হঠাৎ দেখি, তাঁর মুখ এক দিকে বেঁকে গেল। তিনি পড়ে যাচ্ছিলেন। আমরা ধরে ফেলেছি, পড়তে দিইনি। মুখ দিয়ে গেঁজলা বের হচ্ছে, তার পরই অজ্ঞান। আবার কেউ এমনটাও বলে থাকেন, ভালো মানুষ ঘুমাতে গেলেন, সকালে উঠে দেখি এক পাশ অচল।
এমনটা হলে রোগীকে কাত করে শুইয়ে দেবেন। এ অবস্থায় কোনো খাবার বা ওষুধ মুখে দেবেন না। কারণ, এগুলো শ্বাসনালিতে ঢুকে আরও ক্ষতি করে; বরং মুখে জমে লালা, বমি ভালোভাবে পরিষ্কার করে দিতে হবে। টাইট জামা-কাপড় ঢিলে করে দিন।

কোথায় চিকিৎসা করানো যায়
প্রথমে কাছের কোনো চিকিৎসাকেন্দ্রে যেতে হবে। দয়া করে অযথা ভিড় বা হইচই করলে চিকিৎসা ব্যাহত হতে পারে। আবেগ নয়, যুক্তি-ব্যবহারের চেষ্টা করুন। অবশ্য মানুষ যখন কাম-ক্রোধ, ভীতি, দুঃখ প্রভৃতি চূড়ান্ত আবেগ দ্বারা আপ্লুত হয়, তখন কিছুটা হলেও বুদ্ধি-বিবেচনা লোপ পায়।
অনেক রোগীর সঙ্গের লোকেরা ইমার্জেন্সিতে বিশৃঙ্খলা করেন। পরে এসে বলেন, ভাই, কথাটা মনে নিয়েন না, মাথা ঠিক ছিল না। কিন্তু মনে রাখবেন, মাথা ঠিক না থাকলে আপনারই লোকসান।
এরপর রোগীকে নিয়ে কাছের কোনো স্নায়ু চিকিৎসাকেন্দ্রে যেতে হবে। আশার কথা, এখন প্রতিটি বিভাগীয় শহরে স্নায়ু চিকিৎসাকেন্দ্র আছে। ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই সব জেলায় এ সুবিধা ছড়িয়ে পড়বে।