
Epilepsy (মৃগী রোগ)
মৃগী রোগের ফিট আমরা অনেকেই দেখেছি বাড়ীতে, পথেঘাটে বা কাজের জায়গায়। এই মৃগী রোগই হল একটা স্নায়ুর রোগ যেটা সর্ব সাধারনের মধ্যে সবচেয়ে বেশী লক্ষ্য করা যায়।মৃগী রোগের চিকিৎসা সাধারনতঃ স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরাই করে থাকেন।এদের আবার নানা মানসিক সমস্যাও হয়, সেজন্য তাদের কখনও কখনও মানসিক ডাক্তারের কাছেও পাঠানো হয়।এছাড়াও অনেক মানসিক রোগীর পরে মৃগী রোগও হতে পারে।
হিস্টিরিয়া (Hysteria) কি মৃগী রোগ?
আরেক রকমের ফিটের রোগ (কেউ কেউ তাকে মৃগী রোগ বলে থাকেন) আমরা প্রায়শঃই দেখে থাকি।সেটা সাধারনতঃ মেয়েদের মধ্যেই বেশী হয়, এবং মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে হয়। তাকে বলা হয় হিস্টেরিয়া।এই ধরনের ফিটে শুরু হয় সাধারনতঃ ধীরে ধীরে, অবশ্য তাড়াতাড়িও হতে পারে।রোগী প্রথমে অজ্ঞানের মত হয়ে যায়, হাত পা ছুড়তে থাকে বা শক্ত হয়ে যায়।যদি ধরে রাখার চেস্টা করা হয় তবে বেশী করে হয়।কারো কারো এমনিই অজ্ঞানের মতো অবস্থা হয়।অজ্ঞানের মত অবস্থায় নানা আওয়াজ করতে থাকে, বা নানা কথা বলতে থাকে।যে কথাগুলো বলে সেটাতে সাধারনতঃ মনের নানা দন্দ বা চাপের প্রকাশ পায়।কারো কারো ভর হয়েছে বলা হয়।সে সময় তাদের কথার মধ্যে দিয়ে তারা কোন বিশেষ ব্যক্তির বা নিজের মনের ভাব প্রকাশ করে থাকে। কেউ কেউ মনে করে রোগীর মধ্যে কোনো মৃত আত্মা বা অশরীরি আত্মা বা দেব দেবীও ভর হয়েছে।
এই অবস্থা সাধারনতঃ বেশ কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা পর্য্যন্ত হয়, আবার দিনের কোনো বিশেষ সময় হয়। জ্ঞান ফিরে আসার পর, রোগী কিছুই মনে করতে পারে না। তাদের ভাবসাব প্রায় স্বাভাবিক হয়ে যায়। কারো কারো টেনশন, বা উদ্দিগ্ন ভাব বা বিষন্নতা ভাব থাকতে পারে।উপরে যে ফিটের বর্ননা করা হল সেই হিস্ট্রিরিয়াকে আমরা অনেকেই মৃগী রোগ বলে ভুল করে থাকি। এবং এই দুটোর মধ্যে পার্থক্য করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।
হিস্টিরিয়া ও মৃগী রোগের কি করে তফাৎ করা যায়?
নীচের উপসর্গ গুলো থেকে এই দুই রোগকে তফাৎ করা যেতে পারে।
১) হিস্টিরিয়াতে সব সময়ই একটা মানসিক চাপ থাকে, মৃগী রোগে সেটা প্রায় থাকে না।
২) হিস্টিরিয়া মেয়েদেরই বেশী হয়। মৃগী রোগ মেয়ে ও ছেলে দের মধ্যে সমান সংখ্যায় হয়।
৩)হিস্টিরিয়াতে রোগী একেবারে অজ্ঞান নাও হতে পারে।রোগী অনেক সময় কথার উত্তর দেয়,চোখ পিট পিট করে।জ্ঞান ফেরার পর তারা মনে করতে পারে কি হয়ে ছিল।যদিও কেঊ কেউ মনে করতে পারে না ফিটের সময় কি কি কথা তারা বলেছিল। আর মৃগী রোগের ফিটের সময় রোগি কোনো কথার উত্তর দেয় না, জ্ঞান ফেরার পর কিছুই মনে করতে পারে না।
৪)হিস্টিরিয়ার ফিটে রোগির গায়ে কোনো আঘাত বা চোট লাগে না। মৃগী রোগি হঠাৎ অজ্ঞান হ্য়ে পড়ে গিয়ে শরীরে বা মাথায় আঘাত লাগতে পারে।ফিটের সময় নিজের দাঁতের কামড়ে জিব কেটে যেতে পারে।শ্বাস নালিতে খাবার ঢুকে শ্বাসরোধ হতে পারে। এগুলোর কোনোটাই হিস্টিরিয়াতে হয় না।
৫) হিস্টিরিয়াতে জ্ঞান ফেরার পর রোগী তাড়াতাড়ি সজাগ হয়ে যায়।তারপর দুর্বল বোধ করে।কিন্তু ঘুমিয়ে পড়ে না। আর মৃগী রোগির ফিট হয়ে যাওয়ার পর অনেকেই ঘুমিয়ে পড়ে কিছুক্ষনের জন্য।যদি জাগানোর চেস্টা করা হয় তবে তারা সজাগ থাকে না।আশে পাশে কি হচ্ছে বুঝতে পারে না, লোকজনকে চিনতে পারে না, এবং অসংলগ্ন ব্যবহার করে।
৬)হিস্টিরিয়ার ফিটে সাধারনতঃ রোগি কাপড়ে মল,মূত্র ত্যাগ হয়ে যায় না।কিন্তু মৃগী রোগের ফিটে তা হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশী।
৭)হিস্টিরিয়া ফিটের সময় বা পরে পরিক্ষা করে নার্ভের অস্বাভাবিক কোনো সাইন পাওয়া যায় না। মৃগী রোগির স্নায়ুর পরিক্ষায় বিশেষ কিছু সাইন পাওয়া যায়, তার থেকে বোঝা যায় যে এটা একটা স্নায়ুর রোগ।
৮) এছাড়া ইইজি (EEG, Electroencephalography) করলে মৃগী রোগির নানা অস্বাভাবিক রেজাল্ট পাওয়া যায়। কিন্তু হিস্টিরিয়াতে তা পাওয়া যায় না।
এই দুই রোগের আলাদা করা বিশেষ দরকার কারন চিকিৎসাও একদম বিভিন্ন। হিস্টিরিয়ার জন্য মানসিক ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, আর মৃগী রোগের জন্য নিউরোলজিস্ট বা স্নায়ু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।
কত রকমের মৃগী রোগ আছে?
মৃগীরোগটাকে স্নায়ু বিশেষজ্ঞরা তিন ভাগে করছেন—
১) আংশিক মৃগীরোগ(Partial epilepsy); এই ধরনের ফিটে দেহের কোন বিশেষ অঙ্গের কাজ ব্যহত হয়।যেমন—
(ক) ফিটের সময় রোগির হাত ,পা, বা দেহের কোনো অংশ অস্বাভাবিক ভাবে নড়তে পারে।যেমন হঠাৎ এটা শুরু হয় তেমনই হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় বা ঠিক হয়ে যায়। এতে রোগির জ্ঞান থাকে।
(খ) এই ধরনের ফিটে দেহের কোন অংশের সাড় বা অনুভূতির পরিবর্তন হয়। যেমন দেহের কোনো অংশে সাড় থাকে না, বা ঝিন ঝিন, না জ্বালা করে ইত্যাদি।
(গ) এতে হঠাৎ হার্টের ধড়ফড় করা বা রক্তচাপ হঠাৎ বৃদ্ধি হওয়া, মনের মধ্যে হঠাৎ টেনশন আসা কোন কারন ছাড়াই ইত্যাদি।উপরের ফিটগুলোতে রোগি জ্ঞান হারায় না, আর রোগি সব বুঝতে পারে কিছু একটা অস্বাভাবিক অবস্থা হচ্ছে।
২) এই আংশিক মৃগীরোগে পুরো জ্ঞান থাকে না,তারজন্য বুঝতে পারে কি হচ্ছে তাদের মধ্যে। ফিটের সময় সাময়িক ভাবে স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পারে, কারো কারো ডিপ্রেসন বা বিষন্নতা ভাব হয়,কারো কারো প্যানিক অ্যাটাক হয়, কারো কারো জটিল মানসিক ভাবের পরিবর্তন হয়। সাইকোসিসের নানা উপসর্গও থাকতে পারে।কেউ কেউ হঠাৎ অটোম্যাটিক ভাবে কিছু করে ফেলতে পারে। যেমন কাউকে আঘাত করতে পারে ইত্যাদি। জ্ঞান যখন ফেরে তখন তারা কিছু মনে করতে পারে না। আবার এটাও হয় যে কোন ফিট আংশিক ভাবে শুরু হয়ে তারপর সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। তখন অজ্ঞান হারিয়ে হাত পা, দেহের খিঁচুনি হয়।
৩) এই ধরনের মৃগীরোগে সারা শরীরে হয়, রোগীর জ্ঞান থাকে না।বিভিন্ন রকমের ফিট হতে পারে,যেমন—
(ক) পেতি মাল( Petit mal);
ফরাসি ভাষায় পেতি মাল’এর মানে হ’ল “কম বা ছোট অস্বাভাবিকতা”।এই রোগটা সাধারনতঃ ছোট বয়সে (৫,৬ বছর বয়সে) হয়। এটা হলে শিশুরা হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।যা কিছু করছিল তা বন্ধ করে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে,চোখ পিট পিট করে,কথা বন্ধ করে দেয়,ঠোট নড়তে থাকে। এটা কয়েক সেকেন্ডের জন্য হয়। ফিটের সময় ডাকলে সাড়া দেয় না।তারপরে ঠিক হয়ে গেলে আবার খেলতে থাকে। রোগী বলতেও পারে না কি হয়েছে। এই অবস্থা বড় হলে অনেক সময় ঠিক হয়ে যায়। কারো কারো এটা আরো বাড়াবাড়ি হয়ে সারা দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
(খ) আর এক ধরনের ফিটের রোগ,সেটাও বাচ্চা বয়সে শুরু হয়।এটা হয় যেসব বাচ্চার জন্মের সময় ব্রেনে আঘাত লেগেছে বা ব্রেনে কোনো সংক্রামন হয়েছে তাদের মধ্যে।কারো কারো কোনো কারন ছাড়াও হতে পারে। ফিটের সময় বাচ্চার হাত পা হঠাৎ নড়ে ওঠে,বা শক্ত টানটান হয়ে যায়,শরীর বেঁকে যায়,আর বাচ্চাটা এতে কেঁদে ওঠে। এই ধরনের ফিট জেগে বা ঘুমের সময় হতে পারে। এই ধরনের ফিট বেশি হতে থাকলে ব্রেনের ক্ষতি হয়।
(গ) গ্রান্ড মল এপিলেপ্সি(Grand Mal epilepsy)
এই ধরনের মৃগীরোগ প্রায়ঃশই দেখে থাকি। ফিটের সময় রোগী হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে পড়ে যেতে পারে।তাতে শরীরে, মাথায় আঘাত লাগতে পারে। অজ্ঞান হওয়ার আগে অনেক রোগী বেশ বুঝতে পারে যে ফিট হবে।কেউ কেউ অজ্ঞানের সময় মুখের থেকে জোরে আওয়াজ করতে পারে।এটা হয় বুকের শ্বাসপ্রশ্বাসের পেশীগুলো হঠাৎ সংকোচনের জন্য,সেই সময় সারা হাত পা ইত্যাদির পেশীরও সংকোচন হয়। তাতে সারা দেহ ধনুকের মত বেঁকে যায়। এই অবস্থাটা মিনিট খানেক থাকার পর, রোগী দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেয় আর হাত পা, সারা দেহ ঝাকানির মত হতে থাকে।এই অবস্থা হয় কয়েক মিনিট ধরে।
ফিটের সময় রোগীর জিব কেটে যেতে পারে, কাপড়ে মল মূত্র ত্যাগ করতে পারে,মুখের কোনা দিয়ে ফেনা, যেটা রক্তের সঙ্গে মিশে লাল হয়ে যেতে পারে।কেউ কেউ ফিটের সময় বমি করে দেবার জন্য শ্বাস নালিতে খাবার ঢুকে শ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়ে মারা যেতে পারে।
ফিট বন্ধ হবার পর রোগী বেশ কিছুক্ষনের জন্য ঘুমিয়ে পড়ে। কারো কারো জ্ঞান আসার পরেও আশেপাশের কিছু চিনতে পারে না, যেন স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলে,আবার ভীষন ছটফটে বা আক্রমনাত্মক হয়ে যেতে পারে।এমনও হয়েছে যে ফিটের থেকে জ্ঞান ফেরার পর রোগী বাইরে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ছোটাছুটি করছে, তাকে সামলান তখন বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।
(ঘ) আরেক ধরনের ফিট আছে যাতে রোগী হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়। হাত পা, বা দেহ শক্ত হয় না বা কোনো কাঁপা ঝাকুনি হয় না। আবার কারো কারো জ্ঞান হারিয়ে যাওয়ার পর শুধু সারা শরীর শক্ত হয়ে যায়।
(ঙ) কোনো কোনো মৃগীরোগের ফিট দেহের এক দিকে হতে পারে, আন্যদিকে ঠিক থাকে। জ্ঞান থাকে না ফিটের সময়।
উপরের মৃগীরোগের সব বর্ননাগুলো দেওয়া হল, কিন্তু সব নাম দেওয়া হল না, কারন সেগুলোর বাংলায় তর্জমা করা গেল না বলে।
মৃগীরোগের হওয়ার কারন কি?
সব মৃগীরোগের কারন জানা যায় নি, তবে দেখাগেছে যে—
১) জ্বর একটা কারন, এটা হয় সাধারনতঃ বাচ্চা বয়সে। বেশী জ্বর হলেই ফিট হবে, এই ফিটটা অনেকটা গ্র্যান্ড মল এপিলেপ্সির মত। বড় হলে এটা ঠিক হয়ে যায়।
২) মাথায় আঘাত লাগার পর ব্রেনে কোনো ক্ষতি হলে সেই ধরনের মৃগীরোগের চিকিৎসা করা বেশ কঠিন।
৩) ব্রেনে টিউমার হলে, বা ব্রেনে কোনো ধরনের ব্যাক্টিরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রামন হলে ফিট হতে পারে।
৪) এটা মনে রাখা দরকার যে বেশীর ভাগ মৃগীরোগের কারন জানা যায় নি।
বয়স অনুসারে মৃগীরোগের কারন কি কি?
বিভিন্ন বয়সে মৃগীরোগের বিভিন্ন কারন হয়ে থাকে।
১) নবজাত ও শিশুবয়সে ফিটের কারনঃ এই বয়সে ফিটের কারন গুলি হল যেমন, ব্রেনে অক্সিজেন কম হওয়া,জন্মাবার সময় মাথায় আঘাত লাগা,ব্রেনে কোনো সংক্রমন জীবানুর আক্রমন,বা জন্মগত ব্রেনের কোনো অস্বাভাবিক অবস্থা,বা কোনো Metabolic disorder যেমন রক্তে সুগার বা চিনির মাত্রা কম হওয়া ইত্যাদি। মায়েদের যদি কোনো নেশার দ্রব্য যেমন অ্যালকোহল, হেরোইন ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে তাহলে নবজাত শিশুর জন্মাবার পরে ফিট হয়। এছাড়া কারও কারও বংশগত কারনে এই ধরনের ফিট হতে পারে।
শিশু বয়সে ( তিন মাস থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্য্যন্ত) জ্বরের জন্য ফিট এটাই সবচেয়ে বেশী দেখা যায়। এতে শিশুদের ব্রেনে জীবানুর সংক্রানের জন্য হয় না। সাধারনতঃ ১৮ থেকে ২৪ মাসের বাচ্চাদের হয়, তাদের কানে ব্যথা বা বুকে কোনো ইনফেক্সন হয় বা পেট খারাপ হয়। জ্বরের মধ্যে শিশুর ফিট হয়, প্রথমে গা শক্ত হয়, তার পরে সারা দেহ ঝাঁকিয়ে খিঁচুনি হয়। এটা সাধারনতঃ এক বার হয়। এদের বড় হয়ে ফিট হবার সম্ভাবনা থাকে না।কারো কারো কয়েকবার হতে পারে,তাদের ফিটটা বেশী সময় (মিনিট ১৫ কম) ধরে হয়,আর ফিটের সময় সারাদেহে না হয়ে, আংশিক ভাবে হয়। এই ধরনের ফিটের যাদের হয় তাদের বড় হয়ে ফিটের সম্ভাবনা বেশী।
শিশু বয়সেই বেশীর ভাগ মৃগীরোগের আরম্ভ হয়। কিছু বাচ্চা যারা শারীরিক ভাবে সুস্থ তাদের এই গ্রান্ডমল এপিলেপ্সি অর্থাৎ মৃগী রোগ শুরু হয়, তারপর সেই মৃগীরোগের উপসর্গগুলোর পরিবর্তন হতে পারে। এই বয়সেই পেটি মল ফিট,ও অন্যান্য আংশিক মৃগীরোগও শিশু বয়সে শুরু হয়।
২) বয়ঃসন্ধিক্ষনে বা যুবক বয়সে সাধারনতঃ যে সব মৃগীরোগ হয় তাদের কোনো কারন পাওয়া যায় না। এদের বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের কারো মৃগী রোগ থাকতে পারে। এদের মধ্যে যাদের পেটিমল ফিট হত তাদের ফিট হওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা এটার পরিবর্তন হয়ে গ্রান্ডমল ফিট হতে পারে।
এছাড়া এই বয়সে যদি ব্রেনে কোনো রোগের সংক্রমন হয়, বা মাথায় বেশ আঘাত লাগে, তাহলেও ফিট হতে পারে।মাথায় আঘাত লেগে যদি ব্রেনে রক্তক্ষরন হয়, বা আঘাত লাগার পরে যদি অনেকক্ষন ধরে অজ্ঞান অবস্থায় থাকে, বা মাথায় আঘাত লেগে মাথার খুলি ভেঙ্গে গিয়ে ব্রেনে ক্ষতি করে তবে তাদের পরে ফিট হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী হয়। এমনও দেখা গেছে যে মাথায় কম অঘাত লাগার পর কয়েক ঘন্টার বা কয়েকদিনের মধ্যে যাদের আংশিক ফিট হয়েছে তাদের পরে ফিট হওয়ার সম্ভাবনা বেশী
৩) প্রাপ্ত বয়স্ক বা তার পরে ফিট হওয়ার কারন প্রধান কারন, মাথার রক্ত ক্ষরন(সেরিব্রাল অ্যাটাক), ব্রেনে টিউমার, নানারকম ব্রেনের শুকিয়ে যাওয়া(Degenerative diseases) জন্য। সেরিব্রাল স্ট্রোকের পর ফিটটা কয়েক মাস থেকে বছরের পর শুরু হয়।
৪) এছাড়াও আরো অনেক এন্ডক্রিনের রোগ আছে যাতে ফিট হতে পারে।যেমন রক্তে গ্লুকোজ বা চিনি কম হলে, কিডনির রোগে, লিভার কাজ না করলে, রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কম হলে, ইত্যাদি।বেশ কিছু ঔষধ আছে যেগুলো ফিট করতে পারে। ড্রাগ যেমন, কোকেন,অ্যাম্ফিটামিন, মিথাইলফেনিডেট ইত্যাদি, যারা অনেকদিন ধরে ঘুমের ঔষধ খেয়ে নেশা করে বা অ্যালকোহল এর নেশা আছে,যদি হঠাৎ বন্ধ করে,তাদের ফিট হতে পারে।
মৃগী রোগ কি
মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে বৈদ্যুতিক তৈরী হওয়ার কারণে মৃগীরোগ হয়ে থাকে। এর ফলে বার বার খিঁচুনী হয়। খিঁচুনীর সময় কিছু কিছু মৃগীরোগী ভাবলেশহীনভাবে তাকিয়ে থাকে (Stare blankly), আবার কারো ক্ষেত্রে পুরো শরীরে মাংসপেশীর কম্পন (Convulsions) ঘটে।
লক্ষণ ও উপসর্গ
মৃগীরোগের কারণে খিঁচুনীর ফলে সাধারণত: নিচের উপসর্গগুলো দেখা দেয় :
• বিভ্রান্ত বোধ করা
• হাত পায়ে চরমভাবে ঝাঁকুনি/কম্পন হওয়া
• সম্পূর্ণভাবে জ্ঞান হারানো
ছবি: মৃগীর প্রভাব একেবারে শেষ না হওয়া পর্যন্ত রোগীর সাথে থাকতে হবে
তথ্য সূত্র: দুর্যোগে প্রাথমিক চিকিৎসা, পৃষ্ঠা:৬০, বাংলাদেশ ডিজাষ্টার প্রিপেয়ার্ডনেস সেন্টার (বি,ডি,পি,সি), ঢাকা, অক্টোবর ১৯৯৫।
মৃগী রোগী জ্ঞান হারালে করণীয়
• অসুস্থ্য ব্যক্তিকে ব্যস্ত রাস্তা বা লোকজনের ভীড় থেকে আগলে রাখতে হবে
• অজ্ঞান অবস্থায় যাতে কোন আঘাত না লাগে তার ব্যবস্থা করতে হবে। অসুস্থ্য ব্যক্তি যদি পড়ে যেতে থাকে তবে তাকে ধরাধরি করে নিরাপদ জায়গায় হাল্কাভাবে শুইয়ে দিতে হবে
• সম্ভব হলে তার কাপড় ঢিলা করে দিয়ে মাথার নীচে নরম কিছু দিতে হবে
• খিঁচুনী বন্ধ হলে,অসু্স্থ্য ব্যক্তিকে তার শ্বাস নিতে সাহায্য করতে হবে
• মৃগীর প্রভাব একেবারে শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার সাথে থাকতে হবে
• একবারের আক্রমণ তাড়াতাড়ি সম্পূর্ণভাবে সেরে গেলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে
ছবি: মৃগী রোগী অজ্ঞান হয়ে গেলে তার মাথার নিচে নরম কিছু দিতে হবে
তথ্য সূত্র: দুর্যোগে প্রাথমিক চিকিৎসা, পৃষ্ঠা:৬০, বাংলাদেশ ডিজাষ্টার প্রিপেয়ার্ডনেস সেন্টার (বি,ডি,পি,সি), ঢাকা, অক্টোবর ১৯৯৫।
কি করা যাবে না
• বিপদের সম্ভাবনা না থাকলে অসুস্থ্য ব্যক্তিকে নাড়াচড়া করা বা ওঠানো যাবে না
• তাকে জোর করে ঠেসে ধরে রাখা যাবে না
• তার মুখে কিছু ঢুকিয়ে দিয়ে মুখ খুলতে চেষ্টা করা যাবে না
• অসুস্থ্য ব্যক্তিকে জাগানোর চেষ্টা করা যাবে না
• অসু্স্থ্য ব্যক্তি পুরোপুরি সজাগ হয়েছে কি না তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাকে কিছু পান করতে দেয়া যাবে না
• অসুস্থ্য ব্যক্তি কয়েকবার জ্ঞান হারানোর ইতিহাস না থাকলে, জ্ঞান হারানো অবস্থায় কোন রকম জখম না হলে,অথবা জ্ঞান ফিরে আসতে ১৫ মিনিটের চেয়ে বেশী সময় না লাগলে চিকিৎসা সাহায্য বা এম্বুলেন্স চেয়ে পাঠানোর প্রয়োজন নেই।
কখন ডাক্তার দেখাবেন
• ৫ মিনিটের অধিক সময়ব্যাপী খিঁচুনী স্থায়ী হলে
• খিঁচুনী বন্ধ হবার পরও জ্ঞান ফিরে না আসলে
• খুব শীঘ্রই দ্বিতীয়বার খিঁচুনী হলে
• রুগী গর্ভবতী হলে
• রুগীর বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস রোগ থাকলে
• খিঁচুনীর সময় আঘাত প্রাপ্ত হলে
কোথায় চিকিৎসা করাবেন
• উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
• জেলা সদর হাসপাতাল
• মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
• বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
• বেসরকারী হাসপাতাল
কি ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে
মৃগীরোগ শনাক্তকরণের জন্য নিচের পরীক্ষাগুলো করাতে হবে :
• স্নায়ু এবং আচরণগত পরীক্ষা (Neurological and behavioral exam)
• রক্তের পরীক্ষা
মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক পরীক্ষার জন্য নিচের পরীক্ষাগুলো করাতে হবে :
• স্নায়ু-মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা (Neuro-psychological test)
• ইসিজি (ECG)
• কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফী (Computerized tomography)
• ম্যাগনেটিক রিজোন্যান্স ইমেজিং (Magnetic Resonance imaging )
• সিঙ্গেল-ফোটন ইমিশন টমোগ্রাফী Single-Photon emission Computerized tomography)
কি ধরণের চিকিৎসা আছে
রোগের লক্ষণ, মাত্রা এবং রূগীর বয়স অনুযায়ী ডাক্তারের পরামর্শ ও নির্দেশানুযায়ী সকল বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।
চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে-
• মৃগীরোগ প্রতিরোধক ঔষধ (Anti epileptic) সেবন
• শল্য এবং অন্যান্য চিকিৎসা
জীবন-যাপন পদ্ধতি
• ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ সেবন করা যাবে না
• গর্ভধারণ করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে
• পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে
• ‘রুগীর মৃগী আছে’ এইরুপ লেখা কোন কাগজ/কার্ড রুগীর সাথে রাখতে হবে
• চাপ কমাতে হবে
• ধূমপান বর্জন করতে হবে
• মদ/নেশা জাতীয় পানীয় পান থেকে বিরত থাকতে হবে
সচরাচর জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন. ১ . মৃগীরোগ হওয়ার কারণগুলো কি কি ?
উত্তর . যেসব কারণে মৃগীরোগ হতে পারে:
• বংশগত কারণে
• সড়ক দূর্ঘটনা অথবা অন্য কোন কারণে মস্তিষ্ক আঘাতপ্রাপ্ত হলে
• স্ট্রোক অথবা হার্ট অ্যাটাকের ফলে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্থ হলে
• বয়স্কদের ক্ষেত্রে মানসিক শক্তির দূর্বলতা (Dementia)
• মেনিনজাইটিস, এইডস এবং ভাইরাল ইনসেফালিটিস (Viral encephalitis) এর মত অসুখ হলে
• সংক্রমণ, অপুষ্টি এবং অক্সিজেনের অভাবের কারণে মায়ের গর্ভের শিশুর মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এর ফলে শিশুর মস্তিস্ক সংক্রান্ত পক্ষাঘাতগ্রস্থতা দেখা দিতে পারে
• অটিসম এবং জন্মগত ভাবে ত্রুটি যেমন : ডাউনস সিনড্রোম (Down syndrome)হলে
প্রশ্ন .২ . কাদের মৃগীরোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে?
উত্তর . যাদের মৃগীরোগ হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি তারা হলেন :
• শিশু বয়সে এবং ৬৫ বছরের পর। তবে এটা যে কোন বয়সেই হতে পারে
• মহিলাদের তুলনায় পুরুষরা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন
• এই রোগের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে
• যারা কোন কারণে মস্তিষ্কে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন
• যাদের স্ট্রোক ও সংবহন নালিকার সমস্যা আছে
• মেনিনজাইটিসের সংক্রমণের কারণে মস্তিষ্কে ও মেরুদন্ডে প্রদাহ হলে
• শিশু বয়সে যদি খুব উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর হয় এবং এর সাথে খিঁচুনীর ইতিহাস থাকে তাহলে পরবর্তী সময়ে মৃগীরোগ দেখা দিতে পারে
প্রশ্ন .৪ .মৃগীরোগের ফলে কি কি জটিলতা দেখা দিতে পারে ?
উত্তর : মৃগীরোগের ফলে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমন :
• পড়ে গেলে মাথায় আঘাত পেতে পারে অথবা হাড় ভেঙ্গে যেতে পারে
• মৃগীরোগ থাকলে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫ গুণ সম্ভাবনা বেশি যে রুগী সাঁতার কাটার সময় ডুবে যেতে পারে
• খিঁচুনীর ফলে বা অজ্ঞান হয়ে গেলে, সেই সময় রুগীর গাড়ী চালনা করলে দূর্ঘটনার সম্ভাবনা বেশি থাকে
• গর্ভাবস্থায় খিঁচুনী হলে মা ও বাচ্চার অনেক বিপদ হতে পারে। কিছু কিছু মৃগীরোগ প্রতিরোধক ঔষধ খেলে বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি দেখা যায়।
আরও কিছু জটিলতা আছে যেগুলো সচরাচর না ঘটলেও দেখা যায়। যেমন :
• দীর্ঘস্থায়ী খিঁচুনীতে মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ রূপে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে
• হঠাৎ মৃত্যু হতে পারে
প্রশ্ন.৫. মৃগীরোগ প্রতিরোধক ঔষধ সেবনের ফলে কি ধরণের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে?
উত্তর.সকল মৃগীরোগ প্রতিরোধক ঔষধের কিছু কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে, যেমন-
• অবসাদ
• মাথা ঘোরা/ঝিমঝিম করা
• ওজন বাড়া
• হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস
• চামড়ায় লালচে দানা
• শারীরিক ক্রিয়াকর্মে সমন্বয়ের অভাব
• কথা বলায় সমস্যা
প্রশ্ন.৬. কিভাবে সুস্থ থাকা যাবে?
উত্তর.
• ডাক্তারের পারমর্শ নিয়মিত ভাবে মেনে চলতে হবে
• নিয়ম অনুযায়ী ঔষধ খেতে হবে
• ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ শুরু করা, বদলানো, মাত্রা বাড়ানো বা বন্ধ করা যাবে না
• কোন ঔষধে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে সাথে সাথে ডাক্তারকে জানাতে হবে
• আচরণগত পরিবর্তন যেমন: অতিরিক্ত বিষাদ দেখা দিলে ডাক্তারকে জানাতে হবে
• পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে